অন্য বছরগুলোয় গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করলেও এ বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে মেহেরপুরের চাষিদের। প্রতি বিঘা কপি চাষে এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান হবে। যারা জমি ইজারা নিয়ে কপি চাষ করেছেন, তারা লোকসান গুনবেন দ্বিগুণ।

বাজারে অপ্রতুল চাহিদা ও শ্রমিক মজুরি, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবছর গ্রীষ্মকালীন পাতাকপির আবাদ হয়েছে ৫৫ হেক্টর জমিতে। একই সঙ্গে কৃষকরা ফুলকপির আবাদ করেছেন ৫০ হেক্টর। চাষিরা নিমজা, মুক্তি হোইট লিডার, টপিক্যাল কুইন, সান প্লাস, কাশেম কিং, গ্রিন স্টার, সুপার কুইনসহ উন্নত জাতের বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ করেছেন। তিন মাস, অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে কপি বাজারজাত করেন কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ৫ টন ও ফুলকপি ৩ টন উৎপাদিত হয়। এতে প্রতিবছর কৃষকরা মোটা অঙ্কের টাকা লাভবান হয়।

মেহেরপুর জেলার সবজিখ্যাত গাংনী উপজেলার সবজিচাষি বাবলু হোসেন জানান, তিনি এ বছর দুই বিঘা মুক্তি জাতের ফুলকপির আবাদ করেছেন। শীতকালে এ জাতের ফুলকপির আবাদে সেচ লাগে দু-একটি। অথচ গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড রোদের কারণে অন্তত ২০টি সেচ লাগে। কীটনাশক ও সারের প্রয়োজন হয় বেশি। এক বিঘা জমিতে ফুলকপি এ বছর অনেক ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কম। শ্রমিকদের মজুরি বেশি। পুরিবহন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। জমির কপি বিক্রি করে খরচের অর্ধেক টাকা হচ্ছে না। কপির দাম না পাওয়ায় অনেক কপি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।

গাড়াডোব গ্রামের কপি চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সিলেট, চিটাগাং ও ঢাকায় বিক্রি করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করতাম। এ বছর বাজারে গ্রীষ্মকালীন কপির দাম না থাকায় পরিবহন খরচ হচ্ছে না। এ ছাড়া কপি বাজারজাত করার আগে শ্রমিক দিয়ে কপি কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কাগজে প্যাকিং, বস্তাসহ এক মণ কপি প্রস্তুত করতে ১৫০ টাকা খরচ হয়ে যায়। এক মণ কপি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

মদনাডাঙ্গা গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, আমাদের দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে দাম কম। ঢাকায় বিক্রি করে গাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে এক টাকাও বাড়ি ফিরে আসেনি। বীজ ও সারের দোকানে বকেয়া আছে। কী করে পরিশোধ করব তাই চিন্তা করে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি।

গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাসেল রানা বলেন, বাঁধাকপি ও ফুলকপি হচ্ছে শীতকালিন সবজি। জোর করে গ্রীষ্মকালে কৃষকরা উৎপাদন করছেন। এতে চাষিরা অনেক টাকা ব্যয় করেন। এ বছর সব ধরনের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করায় কপির চাহিদা একটু কম। দামও অল্প। চাষিদের খরেচর টাকা উঠতে কষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে। অন্যান্য ফসলের জন্য সরকারি প্রণোদনাসহ নানা সুযোগ দিচ্ছে সরকার। সবজি চাষের জন্য সরকারি সহযোগিতা করা গেলে মেহেরপুরে আরও সবজি চাষ বৃদ্ধি হবে। তা নাহলে কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহ হারাবে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুল আলম বলেন, আমরা চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা সহযোগিতা করছি। জেলায় অনেক কৃষক ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা সবজি আবাদ করেছেন। কিন্তু এখানে বাজারজাত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ঢাকা, সিলেট ও চিটাগাং ছাড়া সবজি বিক্রির কোনো মাধ্যম না থাকায় পরিবহন খরচটা অনেক বেশি। চাষিদের লাভের টাকা পরিবহন খরচেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। জেলায় উৎপাদিত সবজি জেলায় বিক্রি করার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে।

এনএ