শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে ১৯টি পণ্য আমদানির কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র একটি পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ভারত সীমান্তবর্তী এই স্থল বন্দরটি। বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েকশ শ্রমিক। কোটি টাকার ঋণপত্র খুলে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। 

তবে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় বাণিজ্য সমঝোতা চুক্তি হলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে নাকুগাঁও স্থল বন্দর।

জানা গেছে, বর্তমানে শুধু ভারত থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে । মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণে কয়লা আসলেও সেটি চাহিদার তুলনায় অনেক কম। 

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শেরপুর -২ (নালিতাবাড়ী-নকলা) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর চেষ্টায় বিগত ১৯৯৭ সাল থেকে নাকুগাঁও শুল্ক বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বন্দর দিয়ে কয়লা ও পাথর ছাড়া সব পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। 

পরে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরটি পরিদর্শন করে এটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা দেন। এরপর ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি নাকুগাঁও এলাকায় পূর্ণাঙ্গ বন্দরের অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এর অবকাঠামো নির্মাণ হয়। এছাড়াও সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নাকুগাঁও থেকে নকলা উপজেলা পর্যন্ত সাড়ে ২৯ কিলোমিটারের সড়কের কাজ করা হয় । 

স্থানীয়রা বলছেন, যেসব পণ্য আমদানি করা সহজ হবে, সেসব পণ্য আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এ বন্দরের ওপারেই মেঘালয় রাজ্য থাকায় সেখান থেকে শুঁটকি মাছ, খৈল, সুপারি ও পশুখাদ্য আমদানি করা সহজ এবং লাভজনক হবে। এ বিষয়ে এনবিআরের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। 

স্থলবন্দরের শ্রমিক আজিজুল বলেন, ‘এই বন্দর দিয়া আগে পাথর, কয়লা আইতো। কিন্তু এখন পাথর আইলেও, কয়লা আহে না। কয়লা আইলে আমাগোর ইনকাম ভালো অইতো। দিনে কয়ডা টেহা বেশি কামাইবার পারতাম।’

নারী শ্রমিক সুরবানু বলেন, ‘আমরা জানছি এইখান দিয়া ১৯টি পণ্য আইতে পারবো। কিন্তু অহন দেহি পাথর আহে। যদি সব পণ্য আইতো তাইলে আমাদের আশপাশের গেরামের কেউ বেকার থাকতো না। সবাই কম বেশি জামাই-বউ মিইল্যা একসাথে কাম করবার পাইতো।’

নাকুগাঁও বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বন্দরে শ্রমিক ইউনিয়ন শাখার অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন প্রায় ৮০০ নারী-পুরুষ শ্রমিক। এছাড়া এই স্থলবন্দরে দৈনিক মজুরি হিসেবে কাজ করেন আরও প্রায় এক হাজার শ্রমিক। যদি অন্যান্য পণ্য আমদানির অনুমতি থাকতো, তবে ভারতের মেঘালয় ও পাশের আরেক দেশ ভুটান থেকে অনেক পণ্যই যেমন গম, সুপারি, হলুদ, শুঁটকি ইত্যাদি আমদানি করা যেত। অপরদিকে স্থানীয়ভাবে অনেকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হতো।

বন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাজেশ চাকমা ঢাকা পোস্টকে জানান, বন্দর দিয়ে কোনো নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়া অনুমোদিত সব পণ্য আমদানি করা যাবে। তবে যেসব পণ্য আমদানি করে রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন সে বিষয়ে নিয়ম মেনে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা যেতে পারে। 

নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিযোগ্য পণ্যগুলো হচ্ছে- গবাদিপশু , মাছের পোনা , তাজা ফলমূল , গাছ-গাছরা , বীজ , গম , পাথর , কয়লা , রাসায়নিক সার , চায়না ক্লে , কাঠ , টিম্বার , চুনাপাথর , পেঁয়াজ , মরিচ , রসুন , আদা , বলক্লে ও কোয়ার্টজ। এসব পণ্য আমদানির কথা থাকলেও ভারত ও ভুটান থেকে শুধু পাথরই আমদানি হয়। 

জাহিদুল খান সৌরভ/আরএআর