হরণী ইউনিয়ন পরিষদ

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চারটি ভোটকেন্দ্র লক্ষ্মীপুরের রামগতির চরগাজী ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে। ১৫ জুন হরণী ইউপিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে চরগাজীর বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। 

এদিকে ভোটকেন্দ্র চারটি সরিয়ে নিতে চরগাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন সম্প্রতি ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করেন। বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নোয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এ লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) নোয়াখালী নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন সরেজমিনে ভোটকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এলাকাবাসী, ভোটার ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। গতকাল শনিবার (২৮ মে) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আবেদনে বলা হয়, লক্ষ্মীপুরের রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের তিনটি মৌজা নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সঙ্গে সীমানা বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুর সাব জজ আদালতে মামলা চলছে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় এলাকায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন আদালত। এতে গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চরগাজী ইউনিয়নে বিরোধী এলাকায় ভোটকেন্দ্রের জন্য অস্থায়ী তাবু দিয়ে কেন্দ্র করা হয়। আগামী ১৫ জুন হাতিয়ার হরণী ইউপি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। 

এনিয়ে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেন। এতে বিরোধীয় এলাকায় চারটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্রগুলো হলো- চরগাজীর টাংকি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর তেগাছিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্লা গ্রাম নূরানী মাদ্রাসা ও ফরেস্ট সেন্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ইউপি চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন জানান, গেজেট অনুযায়ী বিরোধীয় চরলক্ষ্মী, চরদরবেশ, দক্ষিণ টুমচর মৌজার অধিকাংশই ডিয়ারা এমআরআর ও হাল রিভিশনে রামগতির চরগাজীতে রেকর্ডভুক্ত। এসব এলাকার ৯৯ শতাংশ ভোটার চরগাজী ইউনিয়নের বাসিন্দা। এক সময় সিডিএসপি জমি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রামগতির কিছু সংখ্যক লোককে হরণী ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু পরে তারা ফের রামগতি উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসে চরগাজীর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ৭শ-৮শ নারী-পুরুষ চরগাজীর ভোটার হতে নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছেন। 

স্থানীয় লোজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর তেগাছিয়া বাজার ও টাংকি বাজারে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে দুটি ক্যাম্প রয়েছে। এতে স্থিতাবস্থার পরও হরণী ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রগুলো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চরগাজী ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলো হরণী ইউনিয়ন এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তাওহীদুল ইসলাম সুমন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে হরণীর বাসিন্দা নেই। যেটা বলা হচ্ছে, তা উল্লেখযোগ্য নয়। নির্বাচন কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে আমাদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। দ্রুত আমাদের এলাকা থেকে কেন্দ্রগুলো সরিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কার্যকরী সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছি।

রামগতি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ইউপি নির্বাচন হবে পাশের উপজেলা হাতিয়ায় আর কেন্দ্র হবে রামগতিতে, এটা হতে পারে না। এনিয়ে আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বর্তমানে ভোটকেন্দ্র নিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশংঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি আমরা প্রশাসনকেও জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, ভোটকেন্দ্রগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। এ সময় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হয়। ওই কেন্দ্রগুলো নিয়ে সরকারি গেজেট রয়েছে। চরগাজী থেকে হরণীর ভোটকেন্দ্র সরবে কিনা  তা এখনো বলা যাচ্ছে না। 

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর