নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণী হেনস্তার ঘটনায় জড়িত নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১। রোববার (২৯ মে) রাতে শিবপুর উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১১ নরসিংদী ক্যাম্পের কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌহিদুল মবিন খান।

গ্রেপ্তারকৃত নারীর নাম মার্জিয়া আক্তার। তিনি পেশায় একজন ঘটক। তার বাড়ি নরসিংদী সদরের উপজেলা মোড় এলাকায়। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় শিবপুর উপজেলার বোনের বাড়ি থেকে।

র‍্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌহিদুল মবিন খান বলেন, অভিযুক্ত ওই নারী পেশায় ঘটক। তিনি একেক জায়গায় একেক নাম-পরিচয় ব্যবহার করতেন। শিলা ও শায়লা নামেও পরিচিত তিনি। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম মার্জিয়া আক্তার। বর্তমানে তিনি আমাদের হেফাজতে আছেন। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

গত ১৮ মে ভোর সোয়া ৫টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসেন এক তরুণী ও দুই তরুণ। সকাল পৌনে ৬টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তারা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাড়ে ৫টার দিকে স্টেশনে অবস্থানরত মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কী পোশাক পরেছ তুমি?’ তরুণী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এর মধ্যে সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত অন্য কয়েকজন ব্যক্তি।

এ ঘটনা কেউ একজন ভিডিও করেন। পরে সেটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যে এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তার সঙ্গে কথা বলছেন। বয়স্ক এক ব্যক্তিও তার পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে ওই নারী দৌড়ে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে তার পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনো রকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে চলে যান ওই তরুণী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। পরে তারাও দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে চলে যান।

পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দিলে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।

ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তরুণী হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

এরপর সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গত ২০ মে রাত ৯টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ওই ঘটনায় জড়িত মো. ইসমাইল নামে একজনকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে ভৈরব রেলওয়ে থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরের দিন শনিবার বিকেলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান এবং এই ঘটনায় মামলার নির্দেশ দেন।

শনিবার রাতেই ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় মামলাটি করা হয়। মামলায় মো. ইসমাইল ও শিলা ওরফে মার্জিয়া আক্তারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও একজন নারী ও ৮-১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়। গত সোমবার মো. ইসমাইলকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সবশেষ রোববার দিবাগত রাতে নরসিংদীর শিবপুর এলাকায় বোনের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন মার্জিয়া আক্তার।

রাকিবুল ইসলাম/এসপি/জেএস