গোপালভোগের পর এবার ইউরোপের পথে রাজশাহীর খিরসাপাত আম। বুধবার (১ জুন) রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাগান থেকে দেড় টন আমের একটি চালান ইউরোপের উদ্দেশ্যে ঢাকায় গেছে।

চুক্তিভিত্তিতে এই আম চাষ করেছেন উপজেলার কলিগ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাদি এন্টারপ্রাইজ থেকেই এই আম যাচ্ছে ইউরোপে।

শফিকুল ইসলাম জানান, প্রথম দিনে তার প্রতিষ্ঠানের দেড় টন আম নিয়ে সন্ধ্যায় গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে এক টন যাবে যুক্তরাজ্যে। বাকি ৫০০ কেজি হংকংয়ে পাঠানো হবে। এরপর ৩ জুন দুই টন আম যুক্তরাজ্য ও হংকংয়ে পাঠানো হবে। ৬ জুন যুক্তরাজ্যে আরও ১ হাজার ২০০ কেজি আম পাঠাবেন বাঘার চাষিরা।

চলতি মৌসুমে ২০ জন চাষির কাছ থেকে ১৫০-২০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

বাঘা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে চাষ করা আম দেখে শুনে তারা এখান থেকে আমের সঙ্গে একটি প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছেন। তারপর ঢাকার শ্যামপুর প্যাকিং হাউস অ্যান্ড কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে আরেকটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে। এরপর এই আম বিদেশে চলে যাবে। এ লক্ষ্যে তারা শুরু থেকে কৃষকদের নিয়ে কাজ করেছেন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও তদারকির কাজও করেছেন।

বাঘা থেকে আম রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, কৃষকদের আয় বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। রাজশাহীর আমের বিদেশ যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সুইডেন যাচ্ছে গোপালভোগ।

এর আগে গত ২৭ মে রাজশাহী নগরীর জিন্নাহ নগর এলাকার একটি বাগান থেকে ৫০০ কেজি গোপালভোগ আম ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। ওই বাগানটি রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হকের। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন, তাদের সোসাইটি থেকে এবার ৫০ টন আম রপ্তানির লক্ষ্য ধরে রেখেছেন। ধাপে ধাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আটটি দেশে রাজশাহীর আম যাবে।

গত ১৩ মে থেকে গুটি আম নামানোর মধ্য দিয়ে রাজশাহীর আম বাণিজ্য শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী,  ২০ মে থেকে গোপালভোগ ও ২৫ মে থেকে  লক্ষ্মণভোগ, লখনা, রাণীপছন্দ নামছে এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর ও খিরসাপাত নামছে।

এছাড়া আগামী ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪, ১৫ জুলাই থেকে গৌরমতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি জাতের নাম নামবে। 

রাজশাহী জেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে   আমবাগান রয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ টন।  সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০০ কোটি টাকার বেশি আম বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর