কাউনাই নদীটি নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের গুড়ল ও ছয়গাঁও গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এই নদী পারাপারে ২০ গ্রামের ৩০ সহস্রাধিক মানুষের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো। সাঁকোর জায়গায় একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘ দিন দাবি জানিয়ে এলেও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে তা নির্মিত হয়নি। 

তবে সম্প্রতি এলাকার সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ কমাতে নড়বড়ে ওই বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে পঞ্চাশ মিটার দৈর্ঘ্যের মজবুত একটি বাঁশ-কাঠের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন আসমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চন্দু। চেয়ারম্যানের এমন উদ্যোগের সঙ্গে স্বেচ্ছায় জড়িত হন এলাকার সাধারণ মানুষজনও। এখন টেকসই কাঠের সেতু পেয়ে আনন্দিত এলাকাবাসী। 

স্থানীয় বাসিন্দা হানিফ মিয়া বলেন, অনেককেই দেখলাম। কেউ একটা কাঠের সেতুও করে দেয়নি। অবশেষে ইউপি চেয়ারম্যান এটা করে দিয়েছেন। আমরা এলাকার লোকজন তাকে এই কাজে সহযোগিতা করেছি। এতে আমাদের দুর্ভোগ পুরোপুরি না কমলেও এখন থেকে কিছুটা হলেও ঝুঁকিমুক্তভাবে নদী পার হতে পারব। এজন্য চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই। 

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আবু সাদেক খান বলেন, নদীর পশ্চিমপাড় এলাকায় গুড়ল, বড় ভিটা, হাওতলা, গাভারকান্দাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কম পক্ষে ২০ হাজার মানুষ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে দীর্ঘকাল থেকে। উপজেলা সদর ও এলাকার বিভিন্ন হাটবাজারে আসা-যাওয়ার জন্য প্রতিদিন শত শত লোককে কাউনাই নদী পারাপার করতে হয়। এজন্য বাঁশের সাঁকোই ছিল একমাত্র ভরসা। 

তিনি আরও বলেন, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য অনেক চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রীর কাছেই সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সেতু হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। তবে এবার ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চন্দু কাঠের সাঁকো করে দেওয়ায় আমরা অনেক খুশি।

এদিকে কাউনাই নদীর পূর্ব পাড় এলাকার ছয়গাঁও, মনাষ, উজানগাঁওসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ সাঁকোটি ব্যবহার করে আসছে জানিয়ে ছয়গাঁও গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, অনেকেরই জমি নদীর পশ্চিমপাড় এলাকায় রয়েছে। সেতু না থাকায় ফসল আনা যায় না। ক্ষেতেই কম দামে ফসল বিক্রি করে দিতে হয়। 

শিক্ষার্থী সালেহীন মিয়া ও জান্নাতুল মোমিন জানায়, এলাকায় অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। এজন্য প্রতিদিনই কয়েকশ ছাত্র-ছাত্রী সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার হয়। নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে নদীতে পড়ে অনেকেই বই-খাতা হারিয়ে ফেলতাম। এখন আর এমন হবে না। নিরাপদে নদী পার হতে পারব।

আসমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চন্দু বলেন, নদী পারাপারে এলাকার লোকজন খুবই কষ্ট করে আসছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে দেখে আমারও কষ্ট হয়। তাই এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাঠের একটি মজবুত সেতু তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করি। বেশ কয়েক দিনে সুন্দর একটি কাঠের সেতু দৃশ্যমান হয়েছে।

চেয়ারম্যান বলেন, পঞ্চাশ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁশ ও কাঠের সেতুটি নির্মাণ করতে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এ ব্যয় সবটাই আমরা বহন করেছি। এছাড়া সেতুটির দুই পাশসহ রাস্তার কিছু জায়গায় মাটি ভরাটের জন্য টিআর/কাবিখা প্রকল্পের আওতায় এক লাখ টাকার মতো বরাদ্দ পেয়েছি। সে টাকায় মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে।

বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদান করার পর পরই কাউনাই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোর কথা জানতে পারি। নদী পারাপারে এলাকার লোকজন খুব কষ্ট করছেন। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আপাতত একটি বাঁশ-কাঠের সেতু নির্মাণ করে দিয়েছেন। এ কাজে আমরা টিআর/কাবিখা প্রকল্পের আওতায় চেয়ারম্যানকে সহায়তা প্রদান করেছি। এছাড়া ওই এলাকা পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্মকতাদের অবগত করেছি। আশা করি শিগগিরই সেখানে পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে।

জিয়াউর রহমান/এসপি