নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণী হেনস্তার ঘটনায় এক নারী গ্রেপ্তারের পর পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছে দুইটি পক্ষ। বৃহস্পতিবার (২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে একদল প্রগতিশীল নারী এবং বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে স্থানীয় জনগণ গ্রেপ্তার ওই নারীর পক্ষে মানববন্ধন করে। দুটি পক্ষের একটি পক্ষ গ্রেপ্তার মার্জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে এবং অন্য পক্ষ মার্জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে। 

নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা স্থানীয়দের দাবি, তরুণী হেনস্তার ঘটনায় গ্রেপ্তার মার্জিয়া নিরপরাধ এবং তাকে মুক্তি দিতে হবে। এই মানববন্ধনে নরসিংদীর স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।  

অপরদিকে, রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন করা প্রগতিশীল নারীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীকে পোশাকের জন্য হেনস্তা করা অপরাধ। গ্রেপ্তার দুইজনকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে এবং বাকিদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে। এই মানববন্ধনে ঢাকা এবং নরসিংদীর বিভিন্ন সংগঠনের অন্তত ৫০ জন নারী উপস্থিত ছিলেন। 

রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন করা আমরাই পারি নামে একটি সংগঠনের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক তার বক্তব্যে বলেন, রেলওয়ে স্টেশন হোক আর যেখানেই হোক, পোশাকের জন্য কাউকে হেনস্তা করা অপরাধ। যে নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

নেটস নামে একটি সংস্থার কর্মী আফসানা আক্তার বলেন, কোনো নারীর সঙ্গে এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। গ্রেপ্তার ওই নারীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। অপর একটি পক্ষ গ্রেপ্তার নারীর মুক্তির দাবি করছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন মানুষ অপরাধ করেছে। তার পক্ষেও মানুষ আছে, বিষয়টা দুঃখজনক।

নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা রবিউল্লাহ সায়েম নামে একজন বলেন, সংবাদকর্মীরা এই বিষয়টাকে অতিরঞ্জিত করেছে। একজন মা ওই তরুণীকে মেয়ের মতো শাসন করেছে। এটার জন্য গ্রেপ্তার হবে একজন নারী এটা আমরা ভাবতে পারি না। মার্জিয়ার অবিলম্বে মুক্তির দাবি করছি।

স্থানীয় অ্যাডভোকেট শিরিন সুলতানা শেলী বলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ভিডিওটি দেখেছি। সেখানে গ্রেপ্তার মার্জিয়ার অবস্থান আমাদের কাছে স্পষ্ট। ওই ঘটনায় তাকে এইভাবে গ্রেপ্তার করে ৩ দিনের রিমান্ড দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে (বুধবার) রেলওয়ে স্টেশনের ১ নং প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক তরুণী ও তার দুই বন্ধু। এ সময় স্টেশনে অবস্থানরত মাঝবয়সী এক নারী তাদের দেখে বাজে মন্তব্য করেন। ওই তরুণী সেটার জবাব দিলে ওই নারীর সঙ্গে তর্ক হয়। এক পর্যায়ে ওই নারী তরুণীর গায়ে হাত তুলতে গেলে তার দুই বন্ধু প্রতিবাদ করেন। তখন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন বখাটে তরুণীর দুই বন্ধুর সঙ্গে তর্কে জড়ায় এবং তাদের মারতে যায়। এক পর্যায়ে তারা তিনজন স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে রক্ষা পান। 

সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গত ২০ মে (শুক্রবার)  রাত ৯টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে মো. ইসমাইল নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন শনিবার পুলিশের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সবশেষ, রোববার (২৯ মে)  দিবাগত রাতে নরসিংদীর শিবপুর এলাকায় বোনের বাড়ি থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন হেনস্তার ঘটনার মূলহোতা মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলা। পরদিন সোমবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রেলওয়ে পুলিশের করা ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনে মার্জিয়ার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। 

র‍্যাব ১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌহিদুল মবিন খানের ভাষ্য, অভিযুক্ত ওই নারী পেশায় ঘটক। তিনি একেক জায়গায় একেক নাম-পরিচয় ব্যবহার করতেন। যার ফলে শিলা, শায়লা ইত্যাদি নামে পরিচিত তিনি। তবে, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম মার্জিয়া আক্তার। 

নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) হারুনুর রশিদ বলেন, মানববন্ধন করা সবারই অধিকার আছে। আমরা দুটি পক্ষকেই নিরাপত্তা দিয়েছি। কোনো পক্ষেরই কেউ আটক নেই। 

রাকিবুল ইসলাম/আরআই