পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২৫ জুন থেকে সরাসরি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চলাচল শুরু হবে। ফলে নতুন বাস তৈরির ধুম পড়েছে পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ কাজে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

জানা গেছে, শরীয়তপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। পদ্মা নদী থাকায় বাসযোগে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত সম্ভব ছিল না। এক্ষেত্রে শরীয়তপুর থেকে বাসে করে মাঝিরঘাট হয়ে লঞ্চ কিংবা স্পিডবোটে পদ্মা নদী পার হয়ে মাওয়া যেতে হয়। তারপর সেখান থেকে বাসে করে ঢাকা যেতে হয়। পদ্মা সেতু হওয়াতে শরীয়তপুর থেকে সরাসরি বাসে করে ঢাকা যেতে পারবে যাত্রীরা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘোষণার পর থেকে শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসায়ীরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সরাসরি বাস চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এখন তারা নতুন বাস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

আরও জানা গেছে, শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি নামে ৪০টি গাড়ি নামানো হচ্ছে। এছাড়া প্রস্তুত হচ্ছে শরীয়তপুর পরিবহন, গ্লোরি পরিবহন ও পদ্মা ট্রাভেলস নামে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি। 

এদিকে আগে থেকেই শরীয়তপুর থেকে ফেরি পার হয়ে গ্লোরি পরিবহন, শিমুলিয়া থেকে ঢাকা রুটে শরীয়তপুর পরিবহন ও পদ্মা ট্রাভেলসের কয়েকটি গাড়ি চলাচল করছে। পদ্মা সেতু খুলে দিলে এই কোম্পানিগুলোর ২৫০টি বাস চলাচল শুরু করবে। প্রতিটি বাস তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শরীয়তপুর বাসস্টেশনের পাশেই একটি গ্যারেজে বাসের চেসিস ঢালাই দিয়ে লাগানো হচ্ছে। পাশের আরেকটি গ্যারেজে বাসের বডি ফিটিং করা হচ্ছে। বাস তৈরির কাজে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। 

বাস তৈরি শ্রমিক শেখ মামুন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে শরীয়তপুর থেকে ঢাকামুখী বাসের সংখ্যা বাড়বে। আমরা বড় বাস তৈরি করছি। একটি বাস তৈরি করতে আমাদের এক থেকে দেড় মাস সময় লাগছে। কিন্তু আমাদের হাতে সময় না থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তৈরি করে রাস্তায় নামানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক আব্দুল খালেক পালোয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ দিন প্রতীক্ষার পর পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় শরীয়তপুরের পরিবহন মালিক শ্রমিকরা স্বস্তিতে রয়েছে। কারণ কয়েক বছর ধরে লোকসানে ব্যবসা করে আসছি। এখন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় ব্যবসার ধরন পুরোটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।আমরা যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুখ তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা পরিবহন মালিক সমিতি থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শরীয়তপুর থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গাড়ি ছাড়ব। সেই লক্ষে আমাদের গাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। কয়েকটি শরীয়তপুরে আবার কিছু সাভারে বানানো হচ্ছো। হাতে কম সময় পাওয়াতে আমরা তড়িঘড়ি করে গাড়ি বানাচ্ছি। সেতু খুলে দেওয়ার আগেই আমাদের গাড়িগুলো চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। মূলত শরীয়তপুর জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চলবে বলে আশা করছি। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি