ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের প্রভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন ইউপি সদস্যরা। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বাক্ষর জালিয়াতি, বিনা নোটিশে মিটিং, ইউপি সদস্যদের লাঞ্ছিতসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তারা।

সদস্যদের অভিযোগ, ইউনিয়নের টিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপি, ভিজিএফসহ সব প্রকল্পে চেয়ারম্যান দুর্নীতি করেছেন। তার নিজস্ব লোকদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রকল্প বিক্রি করে দিয়েছেন। কোনো প্রকল্পই তাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। বরং তাদের স্বাক্ষর জাল করে তিনি প্রকল্পের টাকা তুলেছেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জমিরুল ইসলামের এসব দুর্নীতি, নিজেদের অসহায়ত্ব ও অবস্থা তুলে ধরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, রাণীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেছেন পরিষদের ছয় সদস্য।

অভিযোগকারী সদস্যরা হলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, ১ নং ওয়ার্ডের ইনতাজ আলী, ২ নং ওয়ার্ডের রশিদুল হক, ৩ নং ওয়ার্ডের মকবুল হোসেন, ৫ নং ওয়ার্ডের শাহিরুল ইসলাম ও ৭ নং ওয়ার্ডের হারুন অর রশিদ। এ ছাড়া ইউনিয়নের একাধিক গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকেরও অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

ইউপি সদস্য হারুন অর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের তোয়াক্কা না করে লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের দিয়ে পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে নাগরিকদের কোনো সেবা দিতে পারছি না। এতে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। ঈদের আগে আমাদের কাছ থেকে ভিজিএফের নামের তালিকা নেওয়া হলো কিন্তু চেয়ারম্যান কাউকে না দিয়ে নিজের মতো বণ্টন করেছেন। আমরা অধিকার ফিরিয়ে চাই। নাগরিকদের সেবা দিতে চাই।

প্যানেল চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ইউপি সদস্যদের সব অভিযোগ সমর্থন করে বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের সম্মানী ভাতাও আত্মসাৎ করেন। তিনি পরিষদে আমাদের কোনো মূল্যায়ন করেন না, কোনো প্রকল্পের বিষয়ে জানান না, মিটিংয়ও করেন না। মিটিং ডাকলেও রাতের বেলায় ডাকেন। তিনি ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করেন। স্বজনপ্রীতি করেন ভিজিডি, ভিজিএফসহ অন্যান্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। আমরা এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

মুনিষগাঁও গ্রামের মোজাম্মেল হক বলেন, মেম্বারের কাছে গেছিলাম। উনি ভোটার আইডি নেন কিন্তু কিছু দেন না। কিছুদিন আগে চাল বিতরণের সময় ইউনিয়ন পরিষদে গেছিলাম। ওখানে দশটা স্লিপ কিনেছি তিন হাজার টাকায়। গরিবের হক চেয়ারম্যানের লোকজন টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন।

গাজীরহাটের বাসিন্দা আজাদ বলেন, আমরা দেখছি চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যদের কিছু মনে করেন না। তিনি নিজের মতো করে পরিষদ চালান। ইউপি সদস্যদেরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জমিরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা ও বানোয়াট। এটি আমার বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করছে। সামনে নির্বাচন, তাই আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে তারা। আমি ইউনিয়ন পরিষদে কখনো কাউকে অপমান করিনি এবং বেআইনি কাজ করিনি। যারা অভিযোগ করেছে, তারা লুটেপুটে খাচ্ছিল, আমি বাধা দেওয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ।

তিনি আরও বলেন, ইউজিপিপি, টিসিবিতে তারা দুর্নীতি করায় আমি বাধা দিয়েছি, এতে বড় সমস্যা হয়েছে আমার। আমি ইউএনও মহোদয়কে বলেছি, যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে আমি সঙ্গে সঙ্গে ইস্তফা দেব।

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুরকার নাঈন কবির স্টিভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এম এ সামাদ/এনএ