জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিমের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (৪ জুন) দুপুরে উপজেলার ইটাখোলা বাজার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ক্ষেতলাল পৌরসভার প্যানেল মেয়র জুলফিকার আলী চৌধুরীর ছেলে খুশি চৌধুরী হামলার নেতৃত্বে ছিলেন বলে আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন। তার দাবি- অতর্কিত হামলায় তার ২০-২২ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন এবং চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে জুলফিকার আলী চৌধুরী তার ছেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে বাকবিতণ্ডার জেরে এই হামলার ঘটনার সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।

পুলিশ, দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগ শনিবার বেলা ১১টায় ক্ষেতলাল পৌরশহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। থানা মোড়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানে ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার ওরফে নাদিমের চাচা ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি তাইফুল ইসলাম তালুকদার এসে মিছিলের ব্যানারের সামনে এক ব্যক্তিকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে রাজাকারপুত্র অ্যাখা দিয়ে ব্যানারটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এনিয়ে সেখানে উভয়ের মধ্য বাকবিতণ্ডা হয়।

এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিম বলেন, ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগ কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলবে না। দলীয় নিয়ম-নীতির বাহিরে কাউকে কিছু করতে দেওয়া হবে না। ক্ষেতলাল আওয়ামী লীগকে জামায়াত-বিএনপি ও রাজাকারের পরিবাররের লোকজন মুক্ত করব। 

এরপর আনোয়ারুজ্জামান তালকুদার তার মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বাড়ির  উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার বহরের পেছনে মামুদপুর ইউনিয়নের নেতাকর্মীরাও যাচ্ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিমের মোটরসাইকেলের বহর ইটাখোলা বাজারে পৌঁছায়। সেখানে  লাঠিসোটা নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকা  ৪০-৫০ জনের একটি দলের লোকজনেরা আনোয়ারুজ্জামান তালুকদারের মোটরসাইকেলের বহরে হামলা চালায়। হামলায় বহরে থাকা বেশ কয়েকজন আহত হন ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি শান্ত করে। এরপর আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার সেখান থেকে তালুকদার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।

ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামায়াত-বিএনপি ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের আজকের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। এলাকার একজন চিহ্নিত রাজাকারপুত্র জুলফিকার আলী সেই বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানারের সামনে ছিলেন। এ কারণে আমার চাচা ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি তাইফুল ইসলাম তালুকদার রেগে যান। আমরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে শেষে আলমপুর এবং বড়াইল ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বাড়িতে ফিরছিলাম। ক্ষেতলালের ইটাখোলা বাজারে ক্ষেতলাল পৌরসভার প্যানেল মেয়র জুলফিকার আলীর ছেলে খুশি চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমার ২০-২২ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মৌখিক অভিযোগ করেছি। পরে মামলা করা হবে।

জুলফিকার আলী চৌধুরী বলেন, আমার পরিবারের কেউ রাজাকার ছিল না। আমি নিজে ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ক্ষেতলাল পৌরসভার প্যানেল মেয়র। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ভাতিজা আনোয়ারুজ্জামান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে তাইফুল ইসলাম তালুকদার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। আমার ছেলে কারও ওপর হামলা করেনি। আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার ইটাখোলা বাজারের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় ব্যবসায়ীরা তাকে ধাওয়া দিয়েছেন।

ক্ষেতলাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন ইয়াজদানী বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।

চম্পক কুমার/আরএআর