শহীদুল ইসলাম

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে দেশসেরা প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রোববার (৫ জুন) রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাড়াদী গ্রামের বাসিন্দা নবিরন বেগম আদালতে এ মামলা করেছেন। 

আদালতের বিচারক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

আসামিরা হলেন নুরুজ্জামান খান খশরু, ইসলাম স্বাবলম্বী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম ও আবুল  হোসেন খান।

শহীদুল ইসলাম স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে তাকে দেশসেরা প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত করা হয়। বিদ্যালয়ে তিনি বিক্রেতাবিহীন ‘সততা স্টোর’ দোকান প্রতিষ্ঠা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ২০১০ সালে একজন প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন এই শহিদুল ইসলাম। ওই ঘটনায় তিনি দীর্ঘদিন সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন।

মামলার অপর আসামি খশরু ঢাকায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। আর আবুল হোসেন খান ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এবার তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। আসামিরা সবাই মানবপাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মামলার বাদী নবিরন বেগম বলেন, আমার তিন মেয়ে। সীমা ছিল সবার বড়। দেখতেও সবচেয়ে বেশি সুন্দর ছিল। গরিব মানুষ। শহীদুল মাস্টার তাকে ঢাকায় কাজ দিতে চান। তার কথামতো আমরা রাজি হই। আমাদের বাড়িতে এসে তারা আমার মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে যান। মাঝেমধ্যে খোঁজ নিতে চাইলে বলতেন, আমার মেয়ে ভালো আছে। কিন্তু মেয়েকে দেখতে চাইলে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। এরপর অনেক ঘুরেছি। চেয়ারম্যান মারধরও করেছেন। তাড়িয়ে দিয়েছিন। আমার মেয়েকে আর পাইনি। থানায় গিয়েছি। অনেক বার শহীদুলের স্কুলে গিয়েছি, তাড়িয়ে দেন, কোনো পাত্তাই দেন না। আমরা গবিব বলে আমাদের কথা কেউ শোনে না। সর্বশেষে কোর্টে মামলা করেছি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আমি কিছুটা জড়িত আছি। খশরু আমার বন্ধু। তার একটি ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে দেখভালের জন্য একটি মেয়ে খুঁজে দিতে বলেছিল। সীমারা গরিব। আমার পরিচিত। আমি উভয়পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে দিয়েছিলাম। খশরুকে আমিই সীমাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা-পয়সা বা বেতন ভাতা ওরা নিজেরাই ঠিক করেছিল। পরে জানতে পারি মেয়েটি নিখোঁজ। আমি সীমার মাকে বেশ কিছু টাকা-পয়সা দিয়েছি সীমাকে খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু তাকে কোথায়ও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নুরুজ্জামান খান খশরু বলেন, মেয়েটি ঢাকায় আসার দুই সপ্তাহের মধ্যে এ ঘটনাটি ঘটেছে। তখন আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। বাসার নিচে ময়লা ফেলতে এসে আর বাসায় ফেরেনি সীমা। সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী বাসায় এসে বিষয়টি জানতে পারে। আমি বাড়িতে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। রাতেই থানায় জিডি করেছিলাম। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে তাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমার ভাই জনপ্রতিনিধি ছিলেন। ২০১১ সালের ঘটনা অথচ মামলা করা হয়েছে সম্প্রতি। এটা টোটালি ফলস, ভিলেজ পলিটিকসের কারণে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করতে এই মামলা করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আদালতের বিচারক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯ জুলাই এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মাস্টার বলেন, এটি অনেক দিন আগের ঘটনা। আমি বা স্থানীয় সবাই কমবেশি বিষয়টি জানি। মেয়ের পরিবারটি খুব গরিব। মেয়েটির মাকে মারধর করার কথা শুনেছি। মাঝেমধ্যে আমার কাছেও আসে। মেয়েটিকে উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য হাত-পা জড়িয়ে ধরে, খুব কান্নাকাটি করে।

মীর সামসুজ্জামা/আরএআর