নরসিংদীর পলাশে ১৪ ইটভাটা গিলে খাচ্ছে এক ইউনিয়নের কৃষি জমি, রাস্তাঘাট ও পরিবেশ। বৈধ ও অবৈধ এসব ইটভাটার কারণে এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নিময়নীতি না মেনে এত ইটভাটা তৈরি করা হলেও নেই প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ। এমনকি প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসী ও কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে হুমকি।

জানা গেছে, পলাশের ডাঙা ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। আবাদি জমির পরিমাণ ৩ হাজার একরেরও কম। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ইউনিয়নে ১৪টি ইটভাটার মধ্যে ৯টি বৈধ ও ৫টি অবৈধ। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য ,এই ইউনিয়নে ইটভাটার সংখ্যা আরও বেশি। কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও এখানে প্রায় সব ইটভাটা ফসলি জমির ওপর করা। যার ফলে গত পাঁচ বছরে এখানে ফসলি জমির উৎপাদন কমেছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ধানের জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। পতিত জমি থেকেও ট্রলি দিয়ে সমানতালে মাটি সরানো হচ্ছে। অবাধে মাটি ও ইট পরিবহনের কারণে ভেঙে গেছে সড়ক।

মুসা মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, যে জমিতে আগে আড়াই থেকে তিন মণ ধান পেতাম সেখানে এখন ধান হয় এক মণ। আর অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও একই। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে আমরা ইটভাটার কাছে মাটি বিক্রি করছি।

ময়িজ উদ্দিন নামে একজন বলেন , ইটভাটার কারণে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আম, কাঁঠাল আগের মতো বড় হয় না। রাস্তার অবস্থা তো আরও খারাপ। রিকশা তো দূরে কথা, হেঁটে চলাচল করা যায় না। বৃষ্টি এলে এসব রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

সবিলা বেগম নামে এক নারী বলেন, আমার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রতিদিন ইট ও মাটিবাহী ট্রলি চলাচল করে। ভাঙা রাস্তা, ধুলা এবং শব্দে আমরা অতিষ্ঠ। কোনো কিছু বললে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। ভয়ে কোনো কিছু বলি না।

এসব বিষয় নিয়ে একাধিক ইটভাটা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্ট করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। তবে
কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র পেয়েই তারা ভাটা স্থাপন করছেন বলে ভাটার ম্যানেজার এবং কর্মচারীরা জানিয়েছেন। তবে কেউই তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।

এদিকে সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে ভাটা স্থাপনের অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে মালিকরা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছাইদুর রহমান বলেন, ইটভাটাতে কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর। মাটির প্রথম স্তরের ৬ ইঞ্চি লেভেলে সমস্ত পুষ্টি উপাদান থাকে, যদি ওই মাটিটুকু সরিয়ে নেওয়া হয় তবে সেই জমিতে ফসল উৎপাদন অনেক কমে যাবে। সেই হিসেবে কোনোভাবেই যেন দুই ফসলি বা তিন ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপনের অনুমতি না দেওয়া হয়, এমন বার্তা প্রতিটি উপজেলা কৃষি অফিসে দেওয়া আছে। কৃষি জমিতে ইটভাটা করার কোনো বিধান নেই এবং যাচাই না করে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না।

নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি পলাশের ডাঙা ইউনিয়নে পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে ৫টি ইটভাটা আমরা অবৈধ ঘোষণা করে তাদের কাছে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাতিল করেছি। যেগুলো বাতিল করা হয়েছে সেগুলোর তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া আছে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, নতুন ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে আমাদের। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। নুতন পুরাতন প্রায় সবগুলো ইটভাটায় আমাদের নজরদারি রয়েছে।

রাকিবুল ইসলাম/এসপি