বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

বর্তমানে দেশে আলোচিত ব্যক্তিদের অন্যতম একজন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা। স্থানীয় রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে আলোচনায় রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ ছোট ভাই। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিমের সঙ্গে বিরোধের জেরে আন্দোলনও করেছেন তিনি, হুমকি দিয়ে রেখেছেন আরও করার। তবে এবার যা করেছেন, তা আগের চেয়েও বড় কিছু! দলীয় কোনো পদে না থেকেও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেই দল থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এ ছোট ভাই।

বহিষ্কৃতরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান ও সাধারণ সম্পাদ নুর নবী চৌধুরী। যদিও আব্দুল কাদের মির্জা কর্তৃক বহিষ্কৃত এ দুই নেতা বলছেন, সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের বহিষ্কার করার এখতিয়ার নেই। বিপরীতে বহিষ্কৃত সভাপতির স্থলাভিষিক্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলছেন, অন্যরা পারলে কাদের মির্জাও পারবেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডাকেন আবদুল কাদের মির্জা। নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী। ওই সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউনুছ।

জানা গেছে, সভায় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান ও সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী অনুপস্থিত ছিলেন। সেখানে সর্বসম্মতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে অপসারণ করে তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরীকে। ওই সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. ইউনুছকে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান বলেন, ‘দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের কোনো চিঠি তিনি পাননি। তবে শুনেছেন, কাদের মির্জা ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে তাকে এবং সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে নতুন দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার (কাদের মির্জা) নেই। কারণ, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদেই নেই।’

খিজির হায়াত খান আরও বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, কাদের মির্জার সিদ্ধান্ত অবৈধ। তারা তাদের পদেই আছেন। শুধু তা–ই নয়, কাদের মির্জা গত কয়েক দিনের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব পরিবর্তন করেছেন, সেগুলোও অবৈধ। পূর্বে যারা যে যে পদে ছিলেন, তারা ওই পদেই থাকবেন।’

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী বলেন, ‘কাদের মির্জার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। জেলা থেকে তার (কাদের মির্জা) নেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়া হবে।’

তবে কাদের মির্জার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হওয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী জানান, কাদের মির্জা যা করেছেন, তা বৈধ। কেউ যদি কাজ না করেন, তাহলে তাকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠ যিনি তাকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। তিনি (ইস্কান্দার) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী প্রশ্ন রেখে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কীভাবে সেলিম ভাইকে (এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী) দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেছিল? আবার ওবায়দুল কাদের সাহেব কীভাবে কাউন্সিল ছাড়া একরাম চৌধুরীকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও খায়রুল আনম চৌধুরীকে জেলা সভাপতি ঘোষণা করেছিলেন?

এদিকে, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অনুমোদন ব্যতীত সংগঠনের কোনো শাখার (ইউনিট, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর) কমিটি বিলুপ্ত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে আবদুল কাদের মির্জার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

এফআর