দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন খুলে দেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরবাসীর মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। ঢাকার বাজার ধরার অপেক্ষায় রয়েছেন জেলার মাছ ব্যবসায়ীরা। 

তারা বলছেন, পদ্মা সেতু খুলে দিলে বছরে পাঁচশ থেকে ছয়শ কোটি টাকার মাছ ঢাকার বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। পরিবহন খরচ কম ও দামে বেশি হওয়ায় লাভ বেশি হবে বলে ধারণা তাদের।

জানা যায়, শরীয়তপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। পদ্মা নদী থাকায় সরাসরি ঢাকা যাওয়া যায় না। শরীয়তপুর থেকে ফেরি পার হয়ে ঢাকা যেতে হয়। এছাড়া শরীয়তপুর থেকে সরাসরি গাড়ি ঢাকা যায় না। বিভিন্ন উপজেলা থেকে গাড়িতে করে এসে পিকআপ বা ট্রাকে করে জেলা শহর থেকে মাছ ঢাকা যায়। নদী পার হতে লম্বা সিরিয়াল ও সময় লাগায় ঢাকার বাজারে মাছ পাঠাতে পারেন না জেলার ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু খুলে দিলে সেই ভোগান্তি আর থাকবে না। সরাসরি বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছের গাড়ি ঢাকা যেতে পারবে।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলায় ১১ লাখ মানুষের বসবাস। এখানে বছরে ২৫ হাজার ৩১৬ মেট্রিক টন মাছের চাহিদা রয়েছে। পদ্মা, মেঘনা ও কীর্তিনাশা নদীতে ঘেরা এই জেলার ১৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে নদীতে মাছ ধরা হয়। এছাড়া ২ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ১৮২টি মাছ খামার রয়েছে। ২৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমির ২২৫টি প্লাবন ভূমি ও ১ হাজার ২৭ হেক্টর জমির ৩৩৪টি ধানখেতে মাছ চাষ করা হয়। জেলার ৪ হেক্টর জমিতে ৩০টি গলদা চিংড়ির হ্যাচারি রয়েছে। জেলায় বছরে ২৮ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন মাছ চাষ, সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন ও ২ হাজর ৯৫৩ মেট্রিক টন নদীর অন্যান্য মাছের উৎপাদন করা হয়। জেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মাছ উৎপাদের সঙ্গে জড়িত। 

মাছ ব্যবসায়ী ও খামারিরা জানান, শরীয়তপুরে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। ঢাকা পৌঁছাতে সময় ও পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় তারা তা ঢাকা না পাঠিয়ে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী ও বরিশালে পাঠান। বিভিন্ন বাজারে গড়ে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি মাছ বিক্রি করা হয়। এতে দিনে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এই হিসেবে বছরে ৫শ থেকে ৬শ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা সম্ভব।

শরীয়তপুরের কনেশ্বর ইউনিয়নের মাছের খামারি এমদাদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলে শরীয়তপুর থেকে নিয়মিত মাছ ঢাকার বাজারে পাঠানো যাবে। ঢাকার বাজারে অন্যান্য বাজারের তুলনায় ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দাম থাকে। এছাড়া পরিবহন খরচ ও সময় কম লাগবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাছ পাঠানো যাবে। এতে করে যেমন ভোগান্তি কমে যাবে, তেমনই মাছ চাষিরা লাভবান হবেন।

আরেক খামারি জাকির হোসেন বলেন, শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যেতে হলে আগে ফেরি পার হওয়া লাগত। ফেরির সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লেগে যেত। ফেরি বিলম্বের কারণে আমরা মাছ ঢাকায় না পাঠিয়ে অন্য জায়গায় পাঠাতাম। এখন পদ্মা সেতু খুলে দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা মাছ ঢাকা পাঠাতে পারব। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, শরীয়তপুরে দিন দিন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও ব্যবসায়ীরা ঢাকায় মাছ পাঠাতে পারতেন না। পদ্মা নদী পাড় হতে আগে ফেরির বিড়ম্বনা ছিল বলে ঢাকার বাজারে মাছ পাঠানো যেত না। পদ্মা সেতু খুলে দিলে সেই বিড়ম্বনা কেটে যাবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকায় মাছ পৌঁছাতে পারবে। পদ্মা সেতুর কারণে মাছের খামারিরা স্বল্প দূরত্বে ভালো বাজার পাবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর