বরিশাল ও ভোলা জেলার সীমান্তবর্তী মহিষমারী চর দখল ঠেকাতে গিয়ে পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ২৮ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে পুলিশ। এতে এখন পর্যন্ত ১২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে গ্রামবাসীর ছোড়া ইটের আঘাতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন এবং ভোলার ভেদুুরিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মহিষাদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন ভোলা সদর ও মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীপুর ইউনিয়নের চৌকিদার মাহেব হোসেন জানান, শ্রীপুর ইউনিয়নের রুবেল কাজী লোকজন নিয়ে ভোলার ভেদুরিয়ায় জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। এই খবরে সেখানকার লোক জড়ো হলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, মেহেন্দীগঞ্জ এবং ভোলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। স্থানীয় রুবেল কাজী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল এবং ভোলার অংশের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। এ নিয়ে প্রায়শই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে পুনরায় হামলা এবং গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি রুবেল কাজী বলেন, ঘটনার সময় আমি বরিশালে ছিলাম। জেনেছি ভোলার পুলিশ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মহিষমারী গ্রামের মধ্যে ঢুকে নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিত হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। এতে মোট ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদেরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শ্রীপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, তাদের মধ্যে নদীভাঙ্গনের শিকার ৩শ পরিবার মহিষমারী চরে বসতি স্থাপন করে থাকছে দশকের পর দশক। সেখানে সীমান্তবর্তী ভোলার চটকীমারী চরের লোকজন এই এলাকা তাদের দাবি করে প্রায়ই হামলা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে ভোলার লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের এলাকার লোকজনের বসত বাড়িতে হামলা করে। 

এ সময় তারা বাধা দিতে গেলে পুলিশ শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে। এতে ২০ জনের মতো আহত হয়। গুরুতর আহতদের মধ্যে ১১ জনকে  শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ ও ভোলার সীমানা বিরোধ নিয়ে দুই এলাকার সীমান্তবর্তী খালের দুই পাশে লোকজন জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে ভোলা সদর থানার এসআই ইনজামুল তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় দুই পাড়ের লোকজন সীমানা বিরোধ নিয়ে ইট-পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৮ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, শ্রীপুর এবং ভেদুরিয়ার মধ্যবর্তী একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজের দুই প্রান্তের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছিলেন শ্রীপুরের রুবেল কাজী। এতে বাধা দেয় ভেদুরিয়ার বাসিন্দা। আজকে রুবেল কাজী স্থানীয় অসংখ্য নারী-পুরুষ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। 

এ সময় সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বরিশাল এবং ভোলা জেলা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা জমি দখলের জন্য অগ্রসর হয়। এক পর্যায় পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শর্টগান থেকে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। যতটুকু যেনেছি তাতে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। তবে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে।

এদিকে পুলিশের ছোঁড়া শর্টগানের ফাঁকা গুলিতে আহতদের মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, চুন্নু হাওলাদারের স্ত্রী সাথী বেগম (৩০), জামাল রাঢ়ির স্ত্রী আমেনা বেগম (৩০), কাশেম হাওলাদারের ছেলে নান্নু হাওলাদার (৪০), দুলাল হাওলাদারের ছেলে রিপন হাওলাদার (২৫), নান্নু হাওলাদারের স্ত্রী আসমা বেগম (৩০), আবুল হোসেনের ছেলে রিয়াজ (৩৫), রহমান হাওলাদারের ছেলে হানিফ (৩৪), দিলু মোল্লার ছেলে আলী হোসেন (১৮), বাবুল গাইনের ছেলে সাইফুল (১৮), বেল্লাল রাঢ়ির ছেলে জামাল রাঢ়ি (৪০), গনি হাওলাদারের ছেলে শাহজাহান (৭০) ও কাঞ্চন মোল্লার স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৫০)। তারা সবাই মেহেন্দিগঞ্জের মহিষমারি গ্রামের বাসিন্দা।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই