চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প-ব্রিজিং (সিডিএসপি-বি) এর উদ্যোগে নোয়াখালীর সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার ৬ হাজার ভূমিহীন পাবে স্থায়ী ঠিকানা। মাথা গোঁজার ঠাঁই, স্বাবলম্বী ও আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকার এ খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ জমি উত্তরাধিকার সূত্র ব্যতীত অন্যত্র হস্তান্তরযোগ্য নয়। এসব পরিবারের নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশীদারত্বের মাধ্যমে এ বন্দোবস্তকৃত ভূমি ব্যবহার করে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সিডিএসপি-বি (ভূমি মন্ত্রণালয় অংশ) প্রকল্পভুক্ত এলাকার ভূমি সম্প্রসারণের কর্মপন্থা নির্ধারণ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রকল্প পরিচালক ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। 

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ভূমিহীন পরিবারের মাঝে খাস জমির খতিয়ান বিতরণ এই সরকারের একটি অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার কার্যক্রম। 'বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না' প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার আলোকে সিডিএসপি প্রকল্প চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর প্রত্যন্ত চর এলাকায় ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাসজমি বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সেমিনারে সিডিএসপির ভূমি বিষয়ক উপদেষ্টা মো. রেজাউল করিম বলেন, চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং বাংলাদেশ সরকারের ১টি গুরুত্বপূর্ণ দারিদ্র বিমোচনমূলক প্রকল্প। প্রকল্পটির পূর্বের ৪টি ফেইজের (১৯৯৪ হতে ২০১৮ পর্যন্ত) সফল বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে ও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় (এ পর্যন্ত ৩৪,০০০ ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ৪৪,০০০ একর খাস জমি বন্দোবস্তের কার্যক্রম সমাপ্ত) ১ জুলাই ২০১৯ হতে ৩০ জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন ৩ বছর মেয়াদি সিডিএসপি-ব্রিজিং প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ইতোমধ্যে আরও ২ বছর (জুন ২০২৩ পর্যন্ত) প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশোধিত ডিপিপি চুড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে । 

মো. রেজাউল করিম আরও বলেন, ইফাদ ও নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়সহ মোট ৪টি মন্ত্রণালয়ের ৫টি সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পটি ২০২২ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অংশে ৬০০০ ভূমিহীন পরিবার ৭০০০ একর কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত পাবে। 

ফলশ্রুতিতে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলাধীন উপকূলীয় চরাঞ্চলের উড়ির চর এবং চর নাঙ্গুলিয়ায় বসবাসরত বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে উপকূলীয় অধিবাসীদের নিরাপদ বসবাস স্থাপন ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সেমিনারের সভাপতি নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায় বলেন, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলাধীন উপকূলীয় চরাঞ্চলের উড়ির চর এবং চর নাঙ্গুলিয়ায় বসবাসরত ৬০০০ ভূমিহীন জনগোষ্ঠী মাঝে ৭০০০ একর কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানের পর ভূমির খতিয়ান বিতরণ করা হবে। পুনর্বাসিত প্রক্রিয়ায় একজন ভূমিহীনের খরচ হয় ৭০০ টাকা। প্রতিটি পরিবারের কাছে গিয়ে এসব খতিয়ান তৈরি করা হয়। ভূমিহীন শুনানি, কবুলিয়ত রেজিস্ট্রেশন সব কাজই স্থানীয় বাজারে করা হয়। এর ফলে ভূমি অফিসে কারও আসার প্রয়োজন হয় না। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করেই এসব খতিয়ান বিতরণ করা হয়।

এ সময় স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক মো. আবু ইউসুফ, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এএফএম শামীম, মো. ইমামুল হাফিজ নাদিম, সৈকত রায়হান, মো. মাসুদুর রহমান, মো. তারিকুল ইসলাম, দেবাশীষ অধিকারী, দেবব্রত দাশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসিব আল আমিন/আরআই