নিম্নমানে খোয়া ব্যবহৃত হচ্ছে রাস্তায়

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজইডি) বাস্তবায়নে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণকাজে ইটের খোয়া দেড় ইঞ্চির কথা বলা হলেও এতে ব্যবহার হয়েছে তিন থেকে চার ইঞ্চি বড় ইটের টুকরা। এসব বড় আকারের ইটের খোয়া মিলিয়ে রাস্তার কাজ ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত মেকাডম হয়ে গেছে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলার বটতলীপাড়া-গালেঙ্গ্যা যাওয়া রাস্তার কাজে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের এমন অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, বড় খোয়া দিয়ে মেকাডমের কারণে কার্পেটিংয়ের সময় বড় খোয়া-বিটুমিন মেশালে তা ফাঁক হয়ে যেতে পারে। এতে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে রাস্তার কাজ টেকসই হবে না বলে মনে করছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছরের আগস্ট মাসে রুমার-বটতলীপাড়া থেকে গালেঙ্গ্যা অফিস পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং করার কাজ শুরু করেন ঠিকাদার রতন কান্তি দাশ।

সে অনুযায়ী ময়ূরপাড়ার পাশে কোলাদাইং ঝিরি আগা থেকে রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হয়ে বটতলী পাড়ার পার্শ্ববর্তী খক্ষ্যংঝিরি কাছাকাছি পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার মেকাডমের কাজ চলছে। রাস্তায় খণ্ড খণ্ড অংশে মেকাডমে আকারে বড় খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নির্মাণকাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল করতেই নিম্নমানের খোয়াগুলো গুঁড়িয়ে বালু-মাটিতে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া নির্মাণকাজে সাইটের এজিং মেকাডম থেকে পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এ অবস্থায় রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বড় বড় খোয় ব্যবহৃত হচ্ছে

এ ব্যাপারে নির্মাণশ্রমিক দেলোয়ার বেশ কয়েক ট্রাক নরম ইট আনার কথা জানিয়ে বলেন, ওগুলো শুরুতে দেওয়া হয়ে গেছে। এখন তো এখানে-ওখানে একটু খারাপ খোয়া আছে। এ সময় পাশে থাকা আরেক শ্রমিক দেলোয়ারকে দমক দিয়ে বলেন, খারাপ খোয়া সব নিচে গেছে। বড় খোয়াগুলো রাস্তায় দিলে মজবুত হবে কি না, তা জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, কন্ট্রাক্টর-ইঞ্জিনিয়ার জানেন।

এদিকে ময়ূরপাড়ার লোকজন অভিযোগ করে জানান, রাস্তার কাজটি তাদের পাড়ার পাশ থেকেই শুরু। তাই কী পরিমাণ বড় ইটের টুকরা দিয়েছে, তা সব তাদের চোখে দেখা। এসব খারাপ কাজের কথা বললেই ঠিকাদারের লোকজন খেপে যান, এমনটা জানান পাড়াপ্রধান কারবারি ক্যশেঅং মারমা।

তিনি আরও বলেন, তার জায়গা থেকে পাহাড় কেটে বালু নিলেও এখনো সব টাকা পরিশোধ করেননি ঠিকাদারের লোকজন। এ সময় স্থানীয় মাখ্যাই চিং জানান, রাস্তায় একটি ইটকে মাত্র তিন ভাগ করে ছোটগুলোর সঙ্গে দিতে দেখেছেন।

এই বিষয়ে ঠিকাদার রতন কান্তি দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খোয়া আকারে বড় এবং খোয়াগুলো আবার ভেঙে দিতে বলেছি। এটা না দিলে যারা খোয়া ভেঙেছে, তাদের কোনো মজুরির টাকা দেব না। নিম্নমানের প্রায় দুই লাখ ইট বাইরে থেকে এনে খোয়া ভেঙে রাস্তায় দিয়ে ফেলেছেন, এমনটা জানতে চাইলে রতন কান্তি দাশ বলেন, কিছু ইট নরম আছে, এগুলো জেলার ইঞ্জিনিয়ারের কথা অনুযায়ী রাস্তার এক স্থানে না দিয়ে বিভিন্ন অংশে দিয়েছি।

এই বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরেজমিনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আকারে বড় ও নিম্নমানের ইটের খোয়াগুলো নিচে দিয়ে রোলিং করা মেকাডমের বিষয়ে করার কিছুই নেই।

রিজভী রাহাত/এনএ