কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের আসাম রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। চার দিন ধরে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার জিঞ্জিরাম, কালোর, কালজানি ও ধরণী নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪৯ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ৫৯২ হেক্টর জমির ফসল ও ৫৭ কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক।

পানি ওঠায় ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা পারাপারের একমাত্র ভরসা এসব এলাকার মানুষের। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের সংকট।

চার দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ার দাবি এসব পানিবন্দি মানুষের।

চার দিন ধরে রৌমারী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা নদী জিঞ্জিরাম, ধরণী ও কালজানির পানিবৃদ্ধির ফলে বন্দী জীবন যাপন করছে রৌমারীর চার ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। উজানের পাহাড়ি ঢলের লালচে কাদা পানিতে মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। দুর্ভোগ বেড়েছে গবাদি পশু-পাখিরও।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রৌমারী উপজেলায় প্রায় ৫শ ৯২ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কাদামাখা পানিতে তলিয়ে থাকা উঠতি আউশ ধান, পাট, মরিচ, কাউন ও তিলসহ বিভিন্ন সবজি জাতীয় ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের কৃষক শাহের আলী বলেন, আমার কাউনক্ষেত, সবজিক্ষেত চার দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। সদর ইউনিয়নের বাওয়াইর গ্রামের মফিজল হক জানান, চারদিকে বন্যার পানি থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন।

যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, চার দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও এখনো কোনো সহায়তা পাননি তারা।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, তালিকা দেওয়া হয়েছে কিন্তু সরকারিভাবে এখনো কোনো বরাদ্দ পাই নাই। বরাদ্দ পেলে তা বন্যাকবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

অন্যদিকে উপজেলার ২২ কিলোমিটার পাকা ও ৩৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এ অবস্থায় নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত করছে বন্যাকবলিত মানুষ।

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউয়ুম চৌধুরী বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এ পর্যন্ত  (মঙ্গলবার) উপজেলার ৫৯২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে আউশ ধান ১৪৭ হেক্টর, পাট ২২৩ হেক্টর, ২২২ হেক্টর শাকসবজি ও তিল তলিয়ে গেছে।

রৌমারী উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মেজবাহ আলম বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার তিন ইউনিয়নের ৫৬ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী জোবায়েত হোসেন জানান, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। 

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল জানান, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত এখনো প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সবকিছুই প্রস্তুত আছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলেই ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে।

মো. জুয়েল রানা/এনএ