ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি প্রদানের দাবিতে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ভেটেরিনারি কলেজ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলেজের প্রধান ফটকের সামনে ঝিনাইদ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।

এতে ঝিনাইদ-চুয়াডাঙ্গা মহা-সড়কে সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। পরে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রথীন্দ্র নাথ রায় তিন দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন। এ সময় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি গাড়ি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায়। তাতে দুজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গাড়িটি পিছু হটে। এরপরই পুলিশের একটি টিমসহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উপস্থিত হয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ডিভিএম ডিগ্রি দেওয়ার কথা থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিএসসি ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এএইচএস ডিগ্রি প্রদান করার চেষ্টা করছে। তাতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই তারা ডিভিএম ডিগ্রির দাবি জানিয়েছেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে পরে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা। একই দাবিতে ১২ জুন মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করে তারা।

কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যখন এই কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন ডিভিএম ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন আমাদের বিএসসি ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এএইচএস ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। এই ডিগ্রি হচ্ছে একটা কম্বাইন্ড ডিগ্রি। যেখানে আমরা ডিভিএমে পড়ছি, সেখানে আমাদের কেন এই কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়া হবে? আমরা যে বিষয়ে ভর্তি হয়েছি, সেই ডিগ্রি চাই।

তিনি আরও বলেন, ডিভিএম একটি ইন্টারন্যাশনাল ডিগ্রি, যা দেশ-বিদেশে পরিচিত। অথচ বিএসসি ভেট সায়েন্স ডিগ্রির এখনো কোনো ইন্টারন্যাশনাল কোড বের হয়নি। তাহলে কেন আমরা এই ডিগ্রি নেব? এটি দিয়ে আমাদের কোনো ইন্টার্ন করারও সুযোগ থাকছে না। এ কারণে আমরা সবাই মিলে আন্দোলনে নেমেছি।

কলেজের সপ্তম বর্ষের শিক্ষার্থী সুবর্ণা সরকার বলেন, আমাদের অবস্থান কর্মসূচি ডিভিএম ডিগ্রির দাবিতে। আমরা ডিভিএমের সিলেবাস, কারিকুলাম অনুযায়ী পড়ছি, পরীক্ষা দিচ্ছি, রেজাল্ট হচ্ছে কিন্তু বলা হচ্ছে বিএসসি ভেট সায়েন্স ডিগ্রি দেওয়া হবে। আমরা সেটি নেব না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বোনের মতো আর বোন। বোনের মতো হলেই তো আর বোন হতে পারে না। আমরা ডিভিএম ডিগ্রি দেখে ভর্তি হয়েছি। এ কারণে আমাদের এই বিক্ষোভ সমাবেশ।

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিবেন সরকার বলেন, আমরা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখে পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের ক্যাম্পাস যখন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়, তখন আমাদের এই ডিগ্রি পরিবর্তন হয়ে যায়। সেখানে আমাদের বিএসসি ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এএইচএস ডিগ্রি দেওয়া জন্য কর্তৃপক্ষ পাঁয়তারা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছি।

আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সুরাহা পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই এই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বলে জানান তিনি। 

কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস সজিবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের যে দাবি, সেই দাবি মেনে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটিসি) আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে দৃশ্যমান ফলাফল দেবেন। আর যদি আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে এর থেকেও কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব আমরা।

ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ছাত্ররা ডিভিএম ডিগ্রির দাবিতে আজ রাস্তায় নেমেছে। তাদের ক্লাসরুম ও গবেষণাগারে থাকার কথা। আমি আন্দোলনত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

তিনি আরও বলেন, এটা জেলাভিত্তিক কোনো সমাধানের বিষয় নয়। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এনএ