ভয়-ভীতির শঙ্কা উপেক্ষা করে পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। একটানা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।

ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্রে এসেছেন শত শত ভোটার। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। কেউ কেউ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছেন।

সকাল থেকে কোলাদী উচ্চ বিদ্যালয়, নলদহ, শহীদ ছাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়, বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, হলুদবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ভাঁড়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দরিভাউডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটারের উপচে পড়া ভিড়। সব কেন্দ্রেই নারী-পুরুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য।

কোলাদী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা বৃদ্ধ আফসার আলী বলেন, আমরা তো কেন্দ্রে আসার কোনো ভরসা পাচ্ছিলাম না। রাত থেকে আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করছিল। কিন্তু ভোট দিতে এসে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পেরেছি। আমার জীবনে এই কেন্দ্রে এত ভোটার দেখিনি।

আওরঙ্গাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধা ঝামেলা খাতুন। তিনি বলেন, কোনো ঝামেলা ছাড়া ভোট দিতে পেরেছি। আমাদের অনেক শঙ্কা ছিল ভোটকেন্দ্র যেতে পারব কি না। তবে কোনো সমস্যা ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে আসছি। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছি।

কোলাদী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ভোট দিতে আসা আকলিমা খাতুন বলেন, সকালে রান্না করা বাদ দিয়ে ভোট দিতে আসছি। খুব ভালোভাবে ভোট দিয়েছি। অনেক দিন পরে হলেও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। 

পাবনা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার, কোলাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার হাসান রশিদ জানান, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আশা করি সারা দিন নিরপেক্ষভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কাউকে কেন্দ্র দখল বা জাল ভোট দিতে দেওয়া হবে না। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৬৭০ জন। 

দরিভাউডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার খাইরুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ৮৮৯টি ভোট পড়েছে।

ভাড়ারা ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীর আবু সাঈদ খান বলেন, আমার এলাকায় ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। ভোটাররা ঠিকমতো ভোট দিলে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, সুলতান ভোটের আগের দিন রাতে আমার এক সমর্থককে ব্যাপক মারধর করেছে। তার কাছে থাকা পেঁয়াজ ব্যবসার ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়াতে আগে থেকেই তার ওপরে ক্ষিপ্ত ছিল। গত রাতে সেটি বাস্তবায়ন করল। ইনশাআল্লাহ আমার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে সঠিক জবাব দেবে।

একই ইউনিয়নের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সুলতান মাহমুদ বলেন, শত শত নারী-পুরুষ ভোটকেন্দ্র আসছেন। পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছে। তবে ভোটগ্রহণের আগে শঙ্কা ছিল ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারবে কি না?

নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে আবু সাঈদ খান গতরাতে সান্টু মেম্বরকে মারধর করার নাটক সাজিয়েছে। আসলে সান্টু মেম্বর ৬০-৭০ হাজার টাকা নিয়ে ভোট ক্রয় করছিল। এ সময় জনগণ তাকে ধরে পুলিশে দিয়েছিল। এরপর নৌকার লোকজন গুজব ছড়ায়। ভাঁড়ারার মানুষ অত্যাচারিত চেয়ারম্যান সাঈদকে প্রত্যাখান করেছে। তাই জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিচ্ছে। ভাঁড়ারাবাসী ২৫ বছর পরে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন হত্যার প্রতিশোধ নিতে মানুষ নতুন নেতৃত্ব বেছে নেবে।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়ছার আহমেদ বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এর আগে একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বলতে গেলে ৩-৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে শুধু এই ইউনিয়ন ঘিরে। এখন পর্যন্ত কোথায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। জাল ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মহিবুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুলিশের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার সময় পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খানের সঙ্গে সংঘর্ষে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম নিহত হন। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সব (চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য) পদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন থেকে ১৫ জুন ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হয়।

রাকিব হাসনাত/এসপি