ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকামে ধীরে ধীরে ধানের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। ফলে দামও কমতে শুরু করেছে। আর ধানের দাম কমতে থাকায় দাম কমেছে চালেরও। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ মোকামে প্রত্যেক জাতের ধানে মণ প্রতি দাম কমেছে ৭০-১০০ টাকা পর্যন্ত। আর চালের বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে পূর্বের চেয়ে ১০০-১২০ টাকা কমে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ ঠিক থাকলে ধানের দাম যেমন আরও কমবে, তেমনি চালের বাজারও স্থিতিশীল থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটে ধানের হাট বসছে। এটি দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকদের ধান কিনে আশুগঞ্জ মোকামে নিয়ে আসেন ব্যাপারীরা। এসব ধান চলে যায় জেলার আড়াইশোরও বেশি চালকলে। আর এখানকার চাল সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায়।

তবে এবার হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যা ও শিলাবৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যায় আশুগঞ্জ মোকামে। আর তাই ভরা মৌসুমেও চড়া ছিল ধানের দাম। অস্থির ধানের বাজারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে চালের বাজারেও। সব জাতের চালেই দাম বাড়ে ১৫০-২০০ টাকা। তবে এখন মোকামে ধানের সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধান ও চালের দামও কমছে।

দিন দশেকের ব্যবধানে প্রত্যেক জাতের ধানে মণ প্রতি দাম কমেছে ৭০-১০০ টাকা এবং চালের বস্তায় দাম কমেছে ১০০-১২০ টাকা। মোকামে যোগান বাড়ায় এখন প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার মণ ধান বেচাকেনা হচ্ছে। 

বর্তমানে মোকামে বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১১৩০ টাকা, বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ১০৩০-১০৬০ টাকা দামে। ধানের বিপরীতে চালের আড়ত থেকে বিআর-২৮ প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) চাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০ টাকা আর বিআর-২৯ চালের প্রতি বস্তার পাইকারি দর ২৩৫০ টাকা। তবে মোকামে এখন বিআর-২৮ ধানের চেয়ে বিআর-২৯ জাতের ধানের চাহিদাই বেশি। কারণ মোকামে যে মানের বিআর-২৮ জাতের ধান আসছে তা থেকে চাল কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মো. মহিউদ্দিন নামে এক ধান ব্যাপারী জানান, তিনি ৫ বছর ধরে ধানের ব্যবসা করছেন। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে আশুগঞ্জ মোকামে নিয়ে আসেন। এখন মোকামে ধানের সরবরাহ বেড়েছে। এর ফলে দামও কমতে শুরু করেছে। মোকামে এখন বিআর-২৯ ধানের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।

আরেক ধান ব্যবসায়ী  হৃদুল মিয়া জানান, ধানের সংকটের কারণে মোকামে দাম বেড়ে গিয়েছিল। এখন সংকট কিছুটা কেটেছে আর সরবরাহ বেড়েছে। এর ফলে দামও কমতে শুরু করেছে। তবে মোকামে এখন যে মানের বিআর-২৮ ধান মিলছে, তা থেকে চাল কম হচ্ছে। সেজন্য বিআর-২৮ এর চেয়ে বিআর-২৯ এর বেচাকেনা বেশি হচ্ছে।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের বাজারদর অনুযায়ী চালের দাম উঠানামা কমে। তবে ঢাকার বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার থেকে প্রচুর পরিমাণ চাল সংগ্রহ করায় চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সেজন্য চালের বাজার ঠিক রাখতে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি আশুগঞ্জ মোকামের ব্যবসায়ীদের।

হাসান ইমরান নামে এক চাল ব্যবসায়ী জানান, বড় বড় কোম্পানিগুলো বাজার থেকে প্রচুর চাল সংগ্রহ করার কারণে বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। তবে সরকার যদি ওইসব কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখে, তাহলে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

আশুগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল সিকদার বলেন, ধানের বাজার দর বেড়ে গেলে এর প্রভাব চালের বাজারেও পড়ে। বেশি দামে ধান কিনলে চালও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এখন মোকামে ধানের সরবরাহ বাড়ছে। সেজন্য চালের দরও কমেছে। কৃষকরা বুঝতে পেরেছেন, ধানের দাম যা বাড়ার বেড়েছে। আর দাম বাড়বে না। সেজন্য তারা ধান ছেড়ে দিচ্ছেন। ধানের বাজার ঠিক থাকলে চালের বাজারও স্থিতিশীল থাকবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, ধান ও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া ধানের মোকাম ও চালের বাজারগুলো মনিটরিং করতে ১৬টি টিম গঠন করা হয়েছে।

এসপি