ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের পাশে সুখ নদীতে অবস্থিত বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত ছিল। সম্প্রতি সাঁকোটি ভেঙে গেছে। এতে করে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এসব মানুষের। 

হাজীপাড়া গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই দিনমজুর। এসব মানুষ প্রতিদিন সকালে কাজের সন্ধানে শহরে ছুটে যান। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধায় বাড়ি ফেরেন তারা। একদিন কাজে না খেলে খাবার জুটবে না তাদের। হঠাৎ সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এসব 
অসহায় মানুষ। একই সঙ্গে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার শিক্ষার্থী ও অসুস্থ মানুষগুলো। এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা এখন আর স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। ওই এলাকার মানুষের দাবি সাঁকোটির স্থানে একটি স্থায়ী ব্রিজ করা হোক।

স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন, আপনারা খবর নিয়ে দেখেন এ গ্রামে যারা বসবাস করেন সবাই দিনমজুর। একদিন বাড়ি থেকে বের না হলে, না খেয়ে থাকতে হবে তাদের। প্রতিবছর চাঁদা তুলে সাঁকোটা ঠিক করি আমরা। এবার পুুরোপুরি ভেঙে গেছে। এতে করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজ যেতে পারছে না। 

তিনি বলেন, গরিবের কষ্ট গরিব না হলে কেউ বুঝবে না। শুধু শুনছি ব্রিজ হবে। কবে হবে এটা আল্লাহই ভালো জানেন। 

স্কুলছাত্র সেলিম জানায়, আমি এই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাই। পার হওয়ার সময় খুব ভয় লাগে। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় স্কুল যেতে পারছি না। আমাদের এখানে ব্রিজ হলে খুব ভালো হবে।

বিধবা আলেয়া বেওয়া বলেন, মোর স্বামী সন্তান কেউ নাই। ভিক্ষা না করলে না খায় থাকিবা হয়। বৃষ্টির তাহানে বাঁশের সাঁকো খান ভাঙে গেছে। এলা মুই ভিক্ষা করিবা পারু না, শহরত যাবা পারু না। আইজ এলাও না খায়ে আছু মুই। সাঁকো খান ভালো করে দেন। 

হাজীপাড়া মসজিদের ইমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এই বাঁশের সাঁকোটি দীর্ঘদিনের। ব্রিজের দাবি অনেকবার করেছি, কিন্তু কেউ কোনো কর্ণপাত করেন না। কেন কর্ণপাত করছেন না এটাই বুঝে উঠতে পারছি না। সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। প্রতিবার বৃষ্টির সময় এটি ভেঙে যায়। এবারও ভেঙে গেল। ভেঙে যাওয়ার কারণে আমরা অচল হয়ে গেছি। নদীর ওই পারে রোড বাজার। যেখানে আমাদের সবকিছু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যেতে হয়। আমাদের এ ভোগান্তি দূর করে এখানে একটি ব্রিজ স্থাপন করে দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে রহিমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রিজের জন্য কয়েক দফায় আবেদন করা হয়েছে। অনেক বড় টেন্ডারের বিষয়। এটি পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কবে এ সমস্যার সমাধান হয়। 

এম এ সামাদ/এমএএস