শখ থেকে মাত্র ১০ গরু দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। সেই খামার থেকে এবার কোরবানির ঈদে ৩০০ গরু বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের মো. এরশাদ উদ্দিন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।

এরশাদের খামারটি এখন কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে। নিজের আয়ের পাশাপাশি এলাকার দরিদ্র মানুষের কম মূল্যে মাংসের চাহিদা মেটাতে চান তিনি। এবার কোরবানি ঈদ উপলক্ষে খামার থেকে কোটি টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করছেন।

এরশাদ উদ্দিন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, তিন বছর আগে এরশাদ উদ্দিন নিজ এলাকায় জেসি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে মোটাতাজাকরণের ৩০০ গরু প্রস্তুত হচ্ছে। খামারের সবচেয়ে বড় গরুটির নাম ব্ল্যাক ডায়মন্ড। ঈদের বড় গরু থেকে শুরু করে ছোট ছোট গরুও রয়েছে। সব গরুকে দেশিও খাবারের মাধ্যমে লালন পালন করা হয়েছে। 

উদ্যোক্তা ও খামারি এরশাদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৯ সালে শখের বশে ১০টি গরু দিয়ে জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের যাত্রা শুরু হয়। ২০২০ সালে খামারটিতে বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন শুরু করি। সে সময় ২৫টি গরু বিক্রি করি। ২০২১ সালে এসে খামার থেকে কোরবানি ঈদে একশোরও বেশি গরু বিক্রি করেছি। এবার কোরবানি ঈদে ৩০০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য হবে পাঁচ কোটি টাকা। এছাড়া খামারে কিছু মহিষও প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই মধ্যে কোরবানির জন্য ১০০টি গরু দূর-দূরান্তের লোকজন কিনে নিয়ে গেছে। গত বছরের চেয়ে এবার ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় এবার খামার থেকে কোটি টাকার ওপরে মুনাফার আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার খামারটি হাওরাঞ্চলে অবস্থিত। তাই চেষ্টা করছি হাওরের পতিত জমিতে অল্প খরচে ঘাস ও ভুট্টা চাষ করার। হাওরে খামার করার কারণ হচ্ছে, তরুণ প্রজন্ম যেন চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করতে পারে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছে। তারা ছোট ছোট খামার তৈরিও করেছে। 

এরশাদ উদ্দিন বলেন, খামারে ২০-২৫ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। গোখাদ্যের বাজার যদি স্থিতিশীল থাকে তাহলে খামার আরও বড় করে আরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান করব। এছাড়া খামার থেকে এলাকার দরিদ্র মানুষরা যাতে কম মূল্যে মাংস কিনতে পারে সেই চেষ্টা করব। 

খামারের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুট্টা দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি প্রাকৃতিক খাবার, সাইলেস খেতে দেওয়া হয় গরু-মহিষকে। আর এ সাইলেসও কেনা হয় না বাজার থেকে। কৃষকদের কাছ থেকে গাছসহ ভুট্টা কিনে খামারেই বানানো হয় এ পশুখাদ্য। ফলে এসব প্রাণি লালনপালনেও খরচ পড়ছে অনেক কম। আর এখানকার কর্মীরাও অনেক দক্ষ। অসুখ-বিসুখে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা নেওয়া ছাড়াই খামারের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসার কাজটা করে থাকে।

খামারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা এরশাদ উদ্দিনের ভাতিজা সাঈদ আল সাহাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশীয় খাবারের মাধ্যমে লালন-পালন করা গরু মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের মূল লক্ষ্য। 

খামারের শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেসি অ্যাগ্রো ফার্ম আমার মতো বেকার যুবকদের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখানে কাজ করে যে টাকা পাই তাতে মোটামুটি ভালোভাবেই সংসার চলে যাই।

গ্রামের বেকার যুবক ফাইজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই জেসি অ্যাগ্রো ফার্ম দেখে আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। আমার ইচ্ছে আছে ছোট করে একটি ফার্ম দেওয়ার।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র বনিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেসি অ্যাগ্রো ফার্ম আমাদের করিমগঞ্জের সবচেয়ে বড় খামার। এই খামারে নিরাপদ উপায়ে দেশীয় পদ্ধতিতে মাংস উৎপাদন করা হয়েছে। খামারে কোনো প্রকার এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়নি। আমরা আশা করছি জেসি অ্যাগ্রো ফার্ম জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

এসপি