নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার (২১ জুন) বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলার কংস, ধনু ও উব্ধাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলার কংস নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার, ধনু নদীর পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার ও উব্ধাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলা পয়েন্টে ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে জেলার সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার নদ-নদীর পানি খুব ধীরগতিতে কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি নতুন করে বৃষ্টিপাত না হয় এবং উজানের ঢল বন্ধ থাকে তাহলে পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে যেভাবে পানি কমছে, তাতে বেশ সময় লাগবে।

এদিকে দুদিন ধরে তেমন বৃষ্টিপাত না থাকায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে কমছে না বন্যাদুর্গত লোকজনের দুর্ভোগ। তারা বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে রয়েছেন। গৃহপালিত পশুপাখি, গরু-ছাগল-ভেড়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা।

অন্যদিকে জেলার ১০ উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে অন্তত দেড় লক্ষাধিক নারী, পুরুষ, শিশু ও প্রতিবন্ধী তাদের গবাদি পশুসহ ঠাঁই নিয়েছেন ৩২৯ আশ্রয়কেন্দ্রে। 

জেলার হাওর উপজেলা খালিয়াজুরীর ৬ ইউনিয়নের সব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি থাকায় তাদের উদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি রোববার থেকে কাজ করছে সেনাবাহিনী ১৯ পদাতিক ডিভিশনের শতাধিক সদস্যের একটি দল। সোমবার দুপুরে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি নকীব আহমেদ খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও এলাকা ঘুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় নেত্রকোণার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী ও খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বন্যাদুর্গতদের সেবায় কাজ করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৩৩৩ মেট্রিন টন চাল, নগদ ১৩ লাখ টাকা ও ৪ হাজার ৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, বন্যাদুর্গতদের সেবায় ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এ ছাড়া জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের একটি টিম গত রোববার থেকে কাজ করে যাচ্ছে। 

জিয়াউর রহমান/এসপি