ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল নগরীর ওপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই যানজটের কারণ হয়ে রয়েছে। নির্মিত ফোরলেনের দুটি লেন ব্যবহৃত হলেও বড় দুটি ডিভাইডারের কারণে বাকি দুটি লেন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ফলে নগরী অতিক্রমের সময় যানবাহনের গতি খুব কম থাকত। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নগরীর ১১ কিলোমিটার মহাসড়ককে বটল নেক হিসেবে বিবেচনা করত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর গাড়ির চাপ সামলাতে মোটেই প্রস্তুত ছিল না এই বটল নেক।

দীর্ঘদিন কাজ করেও বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ উত্তরণের উপায় না পেলেও এবার ভোগান্তি লাঘবে শেষ মুহূর্তে উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। 

ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বটল নেক নগরীর ১১ কিলোমিটার সড়ক নিয়ে বিকল্প চিন্তা করছে নগর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণে দাপ্তরিক কাজ শেষ করেছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সড়কের প্রতিবন্ধকতাগুলো অপসারণ করা হবে। এতে করে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সড়কের প্রশস্ততা বাড়বে। স্থানান্তর করা হবে দুটি বাসস্ট্যান্ড ও তিনটি বাজার।

মঙ্গলবার (২১ জুন) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের ওপর দিয়ে যে মহাসড়কটি গেছে, পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্র বন্দর চালু হওয়ার পরে সেটি যানবাহন চলাচলের চাপ সামলাতে পারবে না। তখন কার্যত অচল নগরীতে পরিণত হবে বরিশাল।

কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি এই বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হলে তিন গুণ বাড়বে গাড়ির চাপ। এ জন্য এই অংশটি প্রশস্ত করা না হলে যানজট লেগেই থাকবে।

সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। তারপরও সড়কটি প্রশস্ত করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার, সার্ভেয়ারবৃন্দ কাজ অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছেন। আশা করছি সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে ১১ কিলোমিটারের প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করব।

মেয়র বলেন, নগরীর নথুল্লাবাদ ও রূপাতলীতে মহাসড়কের পাশেই বাসস্ট্যান্ট। বাসস্ট্যান্ড দুটি থাকলে যানজট আরও বাড়বে। এ ছাড়া তিনটি বাজার রয়েছে। সেগুলোও সরিয়ে ফেলা হবে। এর মধ্যে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে গড়িয়ারপাড় ট্রাক ট্যান্ডে নেওয়া হবে। আর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডটি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নিচে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, নগরীর মধ্যে থেকে যে মহাসড়কটি গেছে সেটির দুুইপাশে পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে সঠিকভাবে সড়কটি নির্মাণ করা হয়নি। ফোরলেন করতে গিয়ে সড়কের মাঝখানে অপ্রয়জনীয় দুটি ডিভাইডার করা হয়েছে। এই ডিভাইডার দুটি ভেঙে ফেলা হবে। তখন ফোরলেন শুধু নয় সিক্স লেনের জমিও বেরিয়ে আসবে।

সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, মহাসড়ক প্রশস্ত করতে যদি দরকার হয় চৌমাথায় সড়কের পাশে নির্মিতব্য আমার মায়ের নামের পার্কটিও ভেঙে ফেলা হবে। মোট কথা হচ্ছে নগরীর মধ্য থেকে যাওয়া ১১ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত হলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক গতিতে আসবে। নগরীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

তিনি আরও বলেন, সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুসারে নগরীর বাইরে থেকে একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ হবে। তাতে কমপক্ষে দুুই বছর সময় লাগবে। ততদিন যেন যানচলাচলে সমস্যা না হয় এজন্য তাৎক্ষণিক গড়িয়ার পাড় থেকে নথুল্লাবাদ হয়ে চৌমাথা, আমতলার মোড়, সাগরদী, রূপাতলী হয়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এতে সড়ক ও জনপথ  আমাদের সহায়তা করবে বলে আশা করি। যদি তারা না করে তাহলে নগরীর মেয়র হিসেবে জনদুর্ভোগ লাঘবে এই কাজ নিজস্ব  অর্থায়নে আমি করব।

মেয়র বলেন, বর্তমানে সড়কটির প্রস্থ রয়েছে ২৪ ফুট। এর দুই পাশে ৬ ফুট করে মোট ১২ ফুট বাড়ানো হবে। এতে সড়কের মূল প্রস্থ দাঁড়াবে ৩৬ ফুট।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই