নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় সিয়াম আহমেদ (১২) নামে এক স্কুলছাত্রকে মাটিতে ফেলে বুকে লাথি মারা এবং বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা ওই শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মারধরের শিকার সিয়াম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছোটরাউতা ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে।

সোমবার (২০ জুন) বিকেলে ছেলেকে মারধরের কারণ জানতে উপজেলা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান মোফজ্জল হোসেন। সেখানে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। পরদিন মঙ্গলবার (২১ জুন) কৃষি কর্মকর্তা সিয়ামের বাবাসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে সরকারি কাজে বাধা ও অফিস ভাঙচুরে অভিযোগে মামলা করেন। পরে পুলিশ স্কুলছাত্রের বাবাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। 

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের ছেলে উপজেলা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র রাহাদ আহমেদ মৃন্ময়ের সাথে একই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম আহমেদের খেলার মাঠে সাইকেল চালানোকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মৃন্ময়ের মা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার স্ত্রী দেখতে পেয়ে মাঠে গিয়ে স্কুলছাত্র সিয়ামকে মারধর করে টেনেহিঁচড়ে তাদের কোয়ার্টারের দিকে নিয়ে যায়।  

একপর্যায়ে তিনি তার স্বামীকে ফোন করে অবগত করলে কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান অফিস থেকে বেরিয়ে এসে উত্তেজিত হয়ে তাদের কোয়ার্টারের সামনে এসে সিয়ামকে মারধর শুরু করেন। তিনি তার বুকে লাথি মারতে থাকেন। এ সময় মাঠে থাকা শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে কারণ জানতে চাইলে ওই কৃষি কর্মকর্তা তাদেরও মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা সিয়ামকে উদ্ধার করে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

ওইদিন সন্ধ্যায় সিয়ামের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাঠে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান এবং কৃষি কর্মকর্তার কাছে ছেলেকে মারধরের কারণ জানতে চান। এসময় উভয়ে তর্ক-বির্তকে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

পুলিশ এ সময় সিয়ামের বাবা মোফাকে আটক করে। পরে রাতেই কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে সরকারি কাজে বাধা, অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগে থানায় মামলা করেন।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের মা স্বপ্না আক্তার বলেন, আমার ছেলে সিয়াম দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। তার খাদ্যনালি চিকন হয়ে গেছে। ৫ম শ্রেণিতে পড়লেও অসুস্থ থাকার কারণে তাকে খাৎনা (মুসলমানি) দেওয়া যায়নি। অপারেশনের জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আমার ছেলে ভুল করলে তিনি আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তাকে শাসন করতাম। কিন্তু তিনি এসে আমার অসুস্থ ছেলের বুকে লাথি মারলেন।

তিনি বলেন, একজন দায়িত্বশীল অফিসার হয়ে এমন জঘন্য কাজ কীভাবে করেন তিনি? আবার উল্টো তিনি আমার স্বামীসহ এলাকার লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মুন্না ইসলাম নামে একজন জানান, আমি অফিসার স্যারের কাছে সিয়ামকে কেন মারছেন জানতে চাইলে তিনি আমার কলার চেপে ধরে উপজেলায় কোনো ডাঙ্গাপাড়ার লোক আসতে পারবে না বলে হুমকি দেন।

ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডা. নাহিদা বলেন, শিশুটির গায়ে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
  
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্র সিয়াম বলে, আমি বিকেলে সাইকেল নিয়ে মাঠে গেলে আমাকে দেখে মৃন্ময় (১১) বলে ‘যারা সাইকেল চালায় তারা মেথর। তাদেরকে কেউ দেখতে পারে না।‘ তখন আমি বললাম আমি তো সাইকেল চালাই, তাই বলে আমি কি মেথর? এরপর সে আমাকে মারধর করে, আমিও তাকে মারি। পরে আন্টি এসে আমাকে মারতে মারতে তাদের বাসার সামনে নিয়ে যান।

আন্টি আঙ্কেলকে ফোন দিয়ে ডেকে আনেন। তিনি এসে আমাকে মারেন এবং মাটিতে ফেলে আমাকে বুকের ওপরে পা তুলে দেন। আমি 
আঙ্কেলকে হাতজোড় করে বলি, আঙ্কেল আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দেন। কিন্তু উনি মারতেই থাকেন। 

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া এটি ডোমার উপজেলা পরিষদের বিষয়। তারা বসে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রমিজ আলম বলেন, স্কুলছাত্র সিয়ামকে মারধরের বিষয়টি জানা নেই। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা অফিসে এসে কিছু লোক হামলা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শরিফুল ইসলাম/আরআই/জেএস