নড়াইলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মো. আজিজুর বিশ্বাস (৪০) নামে একজনকে খুন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২২ জুন) দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. আজিজুর বিশ্বাস রামকান্তপুর গ্রামের মৃত গহের বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় মুদি-দোকানি ছিলেন। 

ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হেনা মিলন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাবু মিয়া ও সাবেক চেয়ারম্যান খান তছরুল ইসলামের মধ্যে নির্বাচনের সময় থেকে বিরোধ চলে আসছিল। কিছুদিন আগে লাবু-সমর্থিত কয়েকজন তছরুল-সমর্থিত মিঠু সরদারকে মারধর করে। এ নিয়ে থানায় মামলা হলে আজিজুর বিশ্বাস আটক হন।

সম্প্রতি তিনি জামিনে বাড়িতে আসেন। বাড়ি থেকে শিয়েরবর হাটে বাজার করার উদ্দেশ্যে বের হলে বেলা ২টায় সবুরের বাড়ির পাশে মিঠু সরদারের নেতৃত্বে কয়েকজন আজিজুরের ওপর অতর্কিত হামলা করে। প্রাণে বাঁচতে তিনি দৌড়ে সবুরের ঘরে ঢুকলে সেখানে ৭ থেকে ৮ জন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা আজিজুরকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনেন।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রান্ত সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজিজুর বিশ্বাসকে গুরুতর জখম অবস্থায় আনা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রেসার মাপার চেষ্টা করি কিন্তু তার হৃৎস্পন্দন না পাওয়ায় আমরা দ্রুত সদরে স্থানান্তরের পরামর্শ দিলে ও আজিজুর যেতে আপত্তি করেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লাবু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত আজিজুর বিশ্বাস নির্বাচনের সময় নৌকার পক্ষে কাজ করেন। একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে মাঠে কাজ করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আমি বিজয়ী হওয়ার পর থেকে সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন বিভিন্ন সময়ে আমার লোকজনের ওপর চড়াও হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ আজিজুরকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

আজিজুরের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যেমন বিধবা হয়েছি, আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, তাদের বউরা যেন বিধবা হয়। আমি স্বামীর হত্যাকরীদের ফাঁসি চাই। আমার স্বামী একমাত্র ইনকামের লোক ছিল, আমার ছেলে-মেয়ে নিয়া আমি এখন কী করব? কোথায় যাব?

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হেনা মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনের আওতায় আনা হবে। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) মোতায়েন আছে।

তিনি আরও বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। দোষীদের আটকে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এনএ