আর মাত্র তিন দিন পর উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। বরিশাল যুক্ত হবে আন্তর্জাতিক রুট এশিয়ান হাইওয়েতে। এতে বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট। কারণ, পদ্মা সেতুর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দক্ষিণাঞ্চলবাসী।

স্বপ্নের এই সেতুর দ্বার উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসবের জনপদে পরিণত হচ্ছে একসময়ের অবহেলিত বরিশাল বিভাগ।

স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে টানা তিন দিনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। রয়েছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বর্ণাঢ্য আয়োজন। তবে সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে লঞ্চে করে সেতু উদ্বোধনের সমাবেশে যোগ দেওয়া।

একাংশ উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ধস নামবে লঞ্চ ব্যবসায়। কিন্তু সেসব উড়িয়ে দিয়ে লঞ্চেই সওয়ার হবেন অর্ধলাখ মানুষ। ইতিমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে ছয় জেলার ৪২ উপজেলায় বার্তা পাঠিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দক্ষিণবঙ্গের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আমরা এক লাখের বেশি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী জনসভায় যোগ দিতে যাব। আমরা এর সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা লঞ্চে করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভায় যোগ দিতে যাব। ইতিমধ্যে ৪৮টি লঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। লঞ্চগুলো বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে ২৪ জুন বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করবে। সর্বশেষ লঞ্চটি এসে পৌঁছার পরে আমরা লঞ্চবহর নিয়ে পদ্মা সেতু অভিমুখে রওনা হব।

বরিশাল জেলা ও মহানগর থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার লোক যাবে। বাকি লোক বিভাগের অন্য সব জেলা-উপজেলা থেকে যাবে। যেসব লঞ্চ পদ্মা সেতু উদ্বোধনে নেতা-কর্মী নিয়ে যাবে, সেগুলোর সাজসজ্জার কাজ প্রায় শেষ। বরিশাল ছাড়াও গৌরনদী, ভোলা, বগা, ঝালকাঠি, ভান্ডারিয়া, বরগুনায় লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেভাবে স্বাধীনতার অর্জন করেছি। তেমনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে আরেকটি বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বরিশালবাসীর ভাগ্যের দুয়ার খুলে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এই দিনটিতে সবচেয়ে বেশি খুশি আমরা। এ জন্য সমাবেশে সবচেয়ে বেশি লোক যোগ দিবে বরিশাল থেকে। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু ক্ষণগণনার পালা। ঐতিহাসিক ২৫ জুন পদ্মার সমাবেশে আমাদের লক্ষাধিক মানুষের যোগ দেওয়া প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে যাওয়া।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ডাকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে যেতে বহু লোক আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারপরও আড়াই হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে উদ্বোধনী সভায় অংশ নেব।

বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, আড়াই হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে লঞ্চযোগে ২৪ জুন বরিশালের উদ্দেশে রওনা হব। সেখানে বহরে যুক্ত হয়ে পদ্মা সেতুর সমাবেশ স্থলে যাবো। আমরা সকল প্রস্তুতি গ্রহন করেছি।

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, পদ্মা সেতুর উপলক্ষে বরগুনার ৬ উপজেলার নেতা-কর্মী লঞ্চ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যাব। প্রথমে ২৪ জুন আমরা প্রতিটি উপজেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে বরিশালের পৌঁছাব। সেখান থেকে একযোগে বিশাল নৌবহর নিয়ে রাত ৯টায় পদ্মা সেতুর উদ্দেশে রওনা করব। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ উপজেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের আয়োজন
বহুল আকাঙ্ক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণ শেষ হচ্ছে। অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দিতে না পারলেও স্থানীয় প্রশাসন এক থেকে তিন দিনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জাানিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা।

বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, বরিশাল নগরীসহ ১০টি উপজেলায় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলবে। সেতুর উদ্বোধনী দিন স্মরণ রাখার মতো উৎসব করা হবে। ওই দিন নগরীতে সকাল ৯টায় র‌্যালি বের করা হবে। ট্রাকে ঘুরে বাউল শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে লেজার শো ও আতশবাজি প্রদর্শন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। পদ্মা সেতুর আদলে সেতু তৈরি করা হবে। স্থানীয় পত্রিকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করা হবে। ২৭ জুন পর্যন্ত বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চিত্রাঙ্কন, রচনাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে পথনাটক ও পথসংগীতসহ ব্যতিক্রমী সব আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, উদ্বোধনী  দিন উদযাপনে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এক দিনের অনুষ্ঠানে র‌্যালি, আলোচনা সভা, অনুষ্ঠান সম্প্রচার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি উৎসব করা হবে।

ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদযাপনে আমরা দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। পদ্মা সেতু হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ জন্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা জেলা উপজেলায় এক দিনের অনুষ্ঠান উদযাপনের আয়োজন করেছি। এতে র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতশবাজি থাকবে।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ঐতিহাসিক ২৫ জুন উদযাপনে আমরা ২৪, ২৫ ও ২৬ জুন তিন দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, পিরোজপুরে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন— তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবে।

বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলের হেডকোয়ার্টার বলা চলে বরিশালকে। তাই বরিশালের আয়োজন ব্যতিক্রম ও স্মরণ রাখার মতো করেই হচ্ছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ