টাঙ্গাইলে যমুনা নদীসহ জেলার সবকটি নদীতেই কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার শতাধিক গ্রামের বানভাসি মানুষজন এখনো পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

শুক্রবার (২৪ জুন) সরেজমিনে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে যমুনার পানি উঠে ঘর-বাড়ি তলিয়ে রয়েছে। অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি ছেলে অন্যত্র চলে গেছে। আবার অনেকেই ঘরেই মাচা উঁচু করে তাতে চরম কষ্টে দিনপার করছেন।

এ ছাড়া উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গাবসারার বেলটিয়া গ্রামের আলম মণ্ডলের স্ত্রী বিমলা বেগম পানিতে নেমে বাড়ির কাজ কর্ম করছেন। সপ্তাহখানেক ধরে তার বাড়িতে পানি ওঠায় অধিকাংশ সময় পানিতেই থাকতে হয়। এতে হাত ও পায়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। এ ছাড়া বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় নৌকায় দিনে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। পানি উঠায় স্বামীরও আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখনোপর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার ক্ষোভ জানিয়েছেন বিমলা বেগম।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভূঞাপুর উপজেলার বেলটিয়াপাড়ার আলম মণ্ডল বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় নৌকায় থাকা-খাওয়া করতে হচ্ছে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় কষ্ট হলেও পানির মধ্যেই বসবাস করছি। তবে বাড়ির গবাদি পশুগুলো অন্যের বাড়িতে রেখেছি চোর-ডাকাতের ভয়ে।

উপজেলার গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আলম শাপলা বলেন, সাত দিন ধরে চরাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিন আগে স্থানীয় প্রশাসন পরিদর্শন করেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, উপজেলায় ৪ হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পেলেই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

অভিজিৎ ঘোষ/আরআই