ঢাকার ধামরাইয়ে পদ্মা সেতুর আদলে নির্মাণ করা সোহাগের সেই পদ্মা সেতু ঝড়ের কবলে পড়ে চুরমার হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চুরমার হতে বসেছে তার স্বপ্নও। বড় ইচ্ছা ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বাস্তব পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য দেখার। কিন্তু নিরাপত্তার বলয় ভেঙে যাওয়ার উপায় জানা নেই তার। যে কোনোভাবেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ চান তিনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সোহাগ।

শুক্রবার (২৪ জুন) বিকেলে পদ্মা সেতুর আদলে সেতু নির্মাতা সোহাগের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি পদ্মা সেতু বাস্তবে দেখিনি। তবে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর আদলে বাড়ির উঠানেই একটি সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করি। অবশেষে পদ্মা সেতুর আদলে একটি সেতু নির্মাণ করি। সেতুটি নিয়ে ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর দূর-দূরান্ত থেকে আমার নির্মাণ করা সেতুটি অনেকেই দেখতে আসেন। আমারও খুব ভালো লাগে। তবে প্রায় আড়াই মাস আগে ঝড়ে একটি গাছ সেতুর ওপর পড়ে চুরমার হয়ে যায় সেতুটি। আমার টিফিনের টাকায় নির্মাণ করা সেতুটি নিমেষেই ধ্বংস হয়ে যায়।

সোহাগ ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের সুতিপাড়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ সুলতান আলীর ছেলে। তিনি ভালুম আতাউর রহমান খান স্কুল ও কলেজে ব্যবসা শাখার একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করা অবস্থায় তিনি ওই সেতু নির্মাণ করেছিলেন।

সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার নির্মাণ করা সেই সেতু ঝড়ের আঘাতে ভেঙে গেলেও এক বুক আশা ছিল প্রকৃত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হব। দেখবো পদ্মা সেতুর প্রকৃত সৌন্দর্য। কিন্তু সে সাধ হয়তো পূরণ হবে না। কারণ সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কীভাবে যাব উপায়ও জানা নেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারলে পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করবো। যদিও আমি দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ শুরু করেছি। আমি চাই আমাকে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ ব্যাপারে সোহাগের বাবা সুলতান আলী ঢাকা পোস্টেকে বলেন, সোহাগ যখন পদ্মা সেতুর আদলে সেতু বানানো শুরু করেছিল তখন ওকে বকাঝকা করতাম। লেখা পড়ায় সময় কম দিয়ে বেশ কিছু দিনের প্রচেষ্টায় সে সেতুটি বানিয়েছে। পরে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ সেতু দেখেতে এসেছে। তারা আমার ছেলের অনেক প্রশংসা করেছেন। আমার অনেক ভালো লেগেছিল। কিন্তু ঝড়ে সেই সেতু ভেঙে গেছে। তবে সোহাগ আবার সেতু নির্মাণ শুরু করেছে। এবার তার ইচ্ছা পদ্মা সেতু দেখে এসে দ্বিতীয় সেতুটি বানাবে। কিন্তু আমি কৃষক মানুষ। আমি জানি না কীভাবে তার ইচ্ছা পূরণ করবো। শুনেছি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অসংখ্য মানুষ উপস্থিত হবে। সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমি কীভাবে তাকে সেখানে নিয়ে যাব। আমার ছেলেটাকে যদি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে তার স্বপ্নটা পূরণ হতো।

এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সাকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতুর আদলে নির্মিত ওই সেতু আমাদের সংসদ সদস্য দেখতে গিয়েছিলেন। আমিও বিষয়টি জানি। তবে নির্মাতা সোহাগ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে চান এটা আগে আমাদের জানাননি। এখন তো হাতে সময় নেই। আগে জানালে হয়তো চেষ্টা করতাম। ১ মাস আগে থেকেই এসএসএফের হাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদেরই এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসে নি। আমরা যেতে পারব কিনা সন্দেহ।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে ঢাকার ধামরাইয়ে সুতিপাড়া এলাকায় নিজ উঠানে মাটি, বাঁশ ও সিমেন্ট দিয়ে পদ্মা সেতুর আদলে সেতু বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সোহাগ। অনেকেই  আসল পদ্মা সেতুর সাধ মিটিয়েছিলেন সোহাগের নির্মাণ করা সেতু দেখে। এর আগে ২০১৯ সালে একটি সেতু তৈরি করেছিলেন তিনি। তবে সেতুটি শুধু মাটি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করায় নির্মাণের কিছু দিন পরই ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। পরে হুবহু পদ্মা সেতু বানানোর পরিকল্পনা নিয়ে  ২০২০ সালের ১ নভেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু করে। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ তার পদ্মা সেতু বানানোর কাজ শেষ হয়। তবে প্রায় আড়াই মাস আগে ঝড়ের কবলে পড়ে সেতুটি ভেঙে যায়।

মাহিদুল মাহিদ/আরএআর