বিদ্যালয়ের কক্ষে তালা দিয়ে ভেতরে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বিদ্যালয়ে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন ইসলামিক সিটি বিদ্যালয় নামের ওই প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস নেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানটির মালিক একই এলাকার বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও ইসলামিক সিটি বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান গেট খোলা। মূল ভবনে উড়ছে জাতীয় পতাকা। এরই মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢোকে। 

জিজ্ঞাসা করতেই তারা জানাল, আমরা প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসি। বিশেষ করে সপ্তাহে তিন দিন বাধ্যতামূলক ক্লাস করি। পরীক্ষাও দিতে হয়।

নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস করি। করোনাকালে ক্লাসে উপস্থিত না থাকায় লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়েছি আমরা। শিক্ষকেরা দায়িত্ব নিয়ে আমাদের ক্লাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। 

দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সামনে আমাদের এসএসসি পরীক্ষা। সেদিকে খেয়াল রেখে পরীক্ষা-ক্লাসের তাগিদ দিয়েছেন স্যারেরা।

এরপর বিদ্যালয়ে ঢুকে বাইরে থেকে বন্ধ থাকা একটি কক্ষের দরজা ঠেলে দেখা যায়, ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। পাঠ গ্রহণে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। প্রতিবেদককে দেখে সবাই মাস্ক পরতে শুরু করলেন। 

আরেক কক্ষে ঢুকে দেখা যায়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ক্লাস করার কারণ জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক রানা উপস্থিত হন। চোখের ইশারায় শিক্ষার্থীদের বলে দেন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা না বলতে। তার কথায় শিক্ষার্থীরা চুপ হয়ে গেল। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বীথি ভৌমিক বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা একেবারে বন্ধের পথে। প্রতি শনিবার প্রতিষ্ঠানে এনে পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্ট করানো হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক রানা বলেন, করোনার সময় শিক্ষকেরা কষ্টে ছিলেন। আমাদের নতুন প্রতিষ্ঠান, নতুন চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীদের শতভাগ পাস করাতে হবে। 

সরকারি নিয়মনীতির ব্যাঘাত ঘটছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাসে এনে পড়াই। এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ করার দরকার নেই।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চলছে। অনলাইন ও অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়। সরকার বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত না দেওয়ার পরও কেন ক্লাস-পরীক্ষা চলছে তার জবাব দিতে পারেননি ইকবাল হোসেন।

বিদ্যালয়ের মালিক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রতি শনিবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতেই বিদ্যালয়ে আসে। ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সরকারি নীতি অমান্য করে কোনো বিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নাই। নীতিমালা অমান্য করে কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/এএম