উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছিল। বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে বর্তমানে কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি মানুষের জীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। 

শুক্রবার (২৪ জুন) বিকেলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি গত ১২ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার কমে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 এ ছাড়া নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে পানি হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। উঁচু এলাকার ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও কিছু চরাঞ্চলসহ নীচু এলাকার ঘর-বাড়িতে এখনো জমে আছে বন্যার পানি। এ অবস্থায় রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্যসহ নানা সংকটের পাশাপাশি এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। অধিকাংশ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। অনেকের হাতে-পায়ে দেখা দিয়েছে ঘা।

উলিপুর উপজেলার মশালের চরের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, গতকাল থাকি বন্যার পানি কমা শুরু হইছে। পানি কমা দেখে ভালো লাগছে। তবে এখনো ঘরে যে যাব তার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়াই বাড়ি এলাকার মাহাবুব মিয়া বলেন, এখনো বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ। ঠিকমত বাজার করতে পারছি না। খাওয়া-দাওয়ার খুব সমস্যা হচ্ছে। আবার পানিতে চলাফেরা করতে করতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বাবুল হোসেন বলেন, বন্যায় আমার ইউনিয়নে ৭ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। গত বৃহস্পতিবার তা ৭শ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এই ইউনিয়নে ৫ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি। মানুষজন ত্রাণে জন্য আসছে কিন্তু দিতে পারছি না।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুর-এ মুর্শেদ জানান, বন্যা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম, ৯টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও ১৮টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম গঠন এবং জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত যে কেউ আমাদের মেডিকেল ডিমকে জানালে পরামর্শসহ প্রয়োজনীও ঔষধ দেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি কমে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছি।

জুয়েল রানা/আরআই