পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে লাগানো হয়েছে এয়ার কন্ডিশনার ও আকাশ ডিটিএইচ। ইকবাল সেপাই নামে এক যুবক তার ঘরে এসব লাগিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

জানা গেছে, ২ বছর আগে ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বালিপাড়া গ্রামের ইকবাল সেপাইকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি একটি ঘর দেওয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার মতো তেমন রাস্তা নেই। তবে কয়েক দিন আগে নিজ খরচে বাড়ির সম্প্রসারণ কাজ করেছেন। বাড়িতে লাগিয়েছেন এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং আকাশ ডিটিএইচ। 

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ইন্দুরকানী উপজেলায় ৫৪৪টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিছু ঘর নির্মাণাধীন থাকলেও বাকি ঘরগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সেগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইকবাল সেপাই বলেন, আমার ঘরটা এমন একটা জায়গায় করা, যেখানে কোনো গাছপালা নেই। ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় রোদের তীব্রতা। ফ্যানের বাতাসেও গরম লাগে। আমার ছোট্ট মেয়েটা ঘুম থেকে ওঠে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে। এ কারণে তার জ্বর ও নানা ধরনের অসুস্থতা তৈরি হয়। অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করে ঋণ ও আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় কিছু টাকা জোগাড় করে সহজ কিস্তিতে এসি কিনি। 

তিনি আরও বলেন, আমি যখন ঘরটি পেয়েছি, তখন আমার আর্থিক অবস্থা চলার মতো ছিল না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘর পেয়েছিলাম। আমার ঘর হওয়ার পরে আমাকে অনেকেই ঋণ দেওয়ার জন্য আগ্রহী হয়েছে। এখন ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছি।

প্রতিবেশী মো. আলমগীর শেখ বলেন, আমি ইকবালকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। সে অনেক পরিশ্রমী একজন মানুষ। রাজমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন কাজ করেছে, এক পর্যায়ে গানের দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিয়ে করার পরে বাবার বাড়িতে জায়গার অভাবে তিন-চার বছর সে ভাড়া বাড়িতে থেকেছে। পরবর্তীতে ঘর পেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে মনোযোগী হয়েছে। তার বাচ্চা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যেত। বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে মানুষের কাছে ধার-দেনা করে সে এসিটি লাগিয়েছে। এটা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আপনার যদি মনে করেন, সে স্বাবলম্বী হয়েছে তাহলে আপনারা আপনাদের ঘর নিয়ে যেতে পারেন।

ইকবালের ছোট চাচা মো. জাহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সে অনেক কষ্ট করে স্বাবলম্বী হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় অটো চালিয়েছে। লুটপাট তো করে নাই। এই ঘরে কি এসি খাটে? ও নিজের সুখের জন্য তো এসি কিনে নাই। সব বাবা চাই তার সন্তান সুখে থাকুক, ভালো থাকুক। বাবা নিজের কিডনি বিক্রি করে হলেও সন্তানের জন্য সবটা করে। কিন্তু এটা নিয়ে এত কিছু করা ঠিক হয়নি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব-দুঃখী জনগণকে ভালোবেসে ঘর দিয়েছে। সে ঘরে যদি এসি লাগানো অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী যে শাস্তি দেবে আমরা তা মাথা পেতে নেব। এই ঘরে এসি লাগানোর পরে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতে শেখ হাসিনার কী ক্ষতি হয়েছে? আমি মনে করি আরও ভালো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভালো ঘর দিয়েছে বলেই আজ সেই ঘরে এসি লাগানো সম্ভব হয়েছে। সে ভাঙাচোরা ঘর দিলে সেখানে এসি লাগানো সম্ভব হতো না।

বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির বয়াতি বলেন, ইকবাল সেপাইকে ঘর দেওয়ার কারণ, তার পরিবারের সবার জন্য যে থাকার জায়গা ছিল তা খুবই কম। এই ঘরে আসার পরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সচ্ছল হয়েছে। সে বর্তমানে বালু ও মাটি কাটার কাজ করে। সে এক বছরের কিস্তিতে এই এসি কিনেছে বলে শুনেছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাকে যখন ঘর দেওয়া হয়, তার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। সে আগে বাবার সঙ্গে এবং বিভিন্ন স্থানে মিস্ত্রিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে সে ব্যবসা করে সচ্ছল হয়েছে। তার একটি ছোট বাচ্চা রয়েছে। ঘরটি টিনের এবং আশপাশে কোনো গাছপালা না থাকায় ঘরে প্রচণ্ড রোদ পড়ে। গরম থেকে বাঁচতে সে কিস্তিতে এসি কিনে বাড়িতে এনেছে বলে আমাদের জানিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. লুৎফুন্নেসা খানমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি একজন সচ্ছল ব্যক্তিকে সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেয়েছি, তিনি আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকায় দুই বছর আগে ঘরটি পেয়েছিলেন। এখন যে অভিযোগটি এসেছে সেটি তদন্তাধীন রয়েছে। দ্রুত সময়ে বিষয়টি নিয়ে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব বলে আশা করছি।

আবীর হাসান/এসপি