সুনামগঞ্জে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। বিপৎসীমার নিচ দিয়ে বইছে নদ-নদীর পানি। শনিবার (২৫ জুন) বিকেল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ শহরের অধিকাংশ সড়ক ও এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। বন্যার পানি নামার পর ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জের। 

ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুনামগঞ্জের সড়কগুলো। কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে এখনো বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। এসব সড়কে চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও। ইট, বস্তা ও বালু ফেলে প্রাথমিকভাবে সড়ক যোগাযোগ পুনরায় স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে। 

বন্যার ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের সদর উপজেলার রাধানগর থেকে বিশ্বম্ভপুর উপজেলার চালবন পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। বন্যার ভয়াবহতা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে এই সড়কের ক্ষত চিহ্নগুলো দেখার পর। পানির চাপ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে ঘূর্ণিঝড়ে গাছ-ঘরবাড়ি যেমন দুমড়েমুচড়ে যায়, ঠিক তেমনিভাবে দুমড়েমুচড়ে গেছে সড়ক। 

এই সড়কের রসুলপুর মাদ্রাসার কাছে সড়ক রক্ষা আরসিসি ঢালাই রডসহ ভেঙে গিয়ে পড়েছে পাশের হাওরে। সড়কে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট গর্ত। কোথাও কোথাও সড়কের কার্পেটিং ও বেইজিং সরে গিয়ে স্রোতে দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত মাটি সরে গেছে। আবার কোনো জায়গায় রাস্তার মাঝ দিয়ে তৈরি হয়েছে খালের মতো। অধিকাংশ সড়কের পাশ থেকে সরে গেছে মাটি। যার কারণে পুরোপুরি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে সুনামগঞ্জের সঙ্গে বিশ্বম্ভপুর ও তাহিরপুরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাওরে পানি থাকায় বিকল্প হিসেবে নৌপথ এখন শেষ ভরসা দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের।

শুধু স্থানীয় মানুষ নয়, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজার হাজার পর্যটক চলাচল করেন। টাংগুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), শিমুল বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমৃদ্ধ পর্যটন উপজেলা খ্যাত তাহিরপুরে যাওয়ার একমাত্র সড়ক পথ এই সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়ক।

পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। গাড়ি দিয়ে, নৌকা নিয়ে, হেঁটে ভেঙে ভেঙে সদর উপজেলায় আসতে হচ্ছে। এতে দ্বিগুণ টাকা খরচ হচ্ছে বলেও জানান তারা। পাশাপাশি ত্রাণ দিতে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের সদস্যরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। 

সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের বাসিন্দা সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আখলাকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই এই সড়কের গর্তে পড়ে বর্তমানে অসুস্থ আছে। একটা মোটরসাইকেল গিয়েছিল সেটাও পড়ে গেছে। আমরা ধরে তুলে দিয়েছি। রাস্তা ঠিক করার কোনো উদ্যোগ না দেখে আমরা কয়েকজন মিলে বালু ফেলে আপাতত শুধু হেঁটে ও মোটরসাইকেল চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন মানুষ একটু যাইতে পারে। 

সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে আসা বিশ্বম্ভপুর উপজেলার সিরাজপুর গ্রামের মুফতি ওবায়দুল হক বলেন, ১০০ বছরের ভেতর এমন ভয়াবহ বন্যা সুনামগঞ্জে হয়নি। যে বন্যায় রাস্তাঘাটে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাস্তাঘাট ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। আমরা কোনো গাড়ি পাইতেছি না। হেঁটে, নৌকায় করে ভেঙে ভেঙে আসতে হচ্ছে। এক টাকার জায়গায় পাঁচ, দশ, পনের টাকা দিতে হচ্ছে। আমরা খুব কষ্ট করে রাস্তায় চলাচল করছি। 

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লিটন হায়দার বলেন, এই যে বিপর্যয়, এটা শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা। আমাদের মুরব্বিরাও এমন বন্যা দেখেননি। এই বন্যায় জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট একেবারেই চলাচল অনুপযোগী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে এই দুর্ভোগ দেখে গেছেন, তিনি নিশ্চয়ই আমাদের পুনর্বাসন করবেন।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক ঢাকা পোস্টকে জানান, সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় সওজের আওতাধীন ৮টি সড়কের ৩৫৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো কিছু জায়গায় পানি আছে। সেখান থেকে পানি নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে যেসব ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা ভেসে উঠছে সেগুলোতে ইটের সলিং, বালু ফেলে প্রাথমিকভাবে সড়ক যোগাযোগ সচল করার উদ্যোগ নিয়েছি। 

আরএআর