পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের সব মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন নদীপথে ভোগান্তির পর মানুষ সহজলভ্য সেতু পেয়ে এখন বেছে নিয়েছে সড়কপথ। কিন্তু যারা এত দিন নদীপথে মানুষকে সেবা দিয়েছে, পার করে দিয়েছে যাত্রী-মালামাল, তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

বাংলাবাজার ঘাট-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, এই এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দিলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক লোক মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। সেতু চালু হওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে তাদের জীবন-জীবিকা। বিশেষ করে ঘাটের দুপাশের হোটেলমালিকরা ও শ্রমিকরা।

পদ্মা সেতু চালুর পর বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে বন্ধ হয়েছে লঞ্চ-স্পিডবোট ফেরিসহ সব সেবা। ফলে এই নৌপথে চলাচলকারী ৮৫টি লঞ্চ ও শতাধিক স্পিডবোটের সঙ্গে জড়িত আছে হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে হতাশা।

এদিকে এ সংকট কাটাতে লঞ্চ ও স্পিডবোট মালিকরা দেশের অন্য নৌপথে লঞ্চ ও স্পিডবোট স্থানান্তরের দাবি তুলেছেন বিআইডব্লিউটিসির কাছে।

লঞ্চ ও স্পিডবোটের মালিকরা জানান, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটের সব নৌপথ চলাচলকারী লঞ্চ ও স্পিডবোটকে অন্য নৌপথে নেওয়া না হলে আমাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কী খাব। আমাদের পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

লঞ্চচালক ইমরান শঙ্কার কথা জানিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার এই নৌপথ। পদ্মা সেতু চালুর পর জনশূন্য হয়ে পড়েছে লঞ্চঘাট। শুনেছি ঘাট চালু থাকবে। কিন্তু কমে যাবে এর গুরুত্ব। ফলে টান পড়বে আমাদের রুজি-রোজগারে।

কথা হলো স্পিডবোটচালক হারেছের সঙ্গে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মানুষ সুফল পাবে, আপনাদের মন খারাপ কেন? তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হয়েছে ভালো, কিন্তু ঘাট থেকে কী হবে? অনেকেই সচরাচর এই ঘাটে আর আসবে না। তখন আমাদের স্পিডবোট অচল থাকবে। আয় বন্ধ হবে। কী করব এখন ভেবে পাচ্ছি না। এসব চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া লঞ্চমালিক সমিতির এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন রুটের খোঁজে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন লঞ্চমালিকরা। এর মধ্যে জামালপুর জেলার জামালপুর-সারিয়াকান্দি রুট, নড়িয়া-চাঁদপুর রুটের আলুবাজার ফেরিঘাট এবং ফরিদপুরের চরভদ্রাসন-মৈনট ঘাটে লঞ্চ সার্ভিস চালুর বিষয়ে প্রাথমিক লক্ষ্য রয়েছে। তবে পরিদর্শনের পর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

 শাহিন-সোনিয়া লঞ্চের মালিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া কাঁঠালবাড়ি ঘাটের লঞ্চগুলোকে বিকল্প নৌরুটে নেওয়ার কথা চলছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদি কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, তাহলে অসংখ্য পরিবার বিপর্যয়ের মুখে থেকে বাঁচতে পারবে।

সব মিলিয়ে হাজারের অধিক পরিবার এ কার্যক্রমে জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, রুটি-রুজির জায়গা এই লঞ্চঘাট। সেতু চালুর কারণে নৌরুটে লঞ্চ চলাচল দরকার হবে না। আমরা বিকল্প নৌরুটে লঞ্চ চালানোর জন্য অনেক আগে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাইনি।

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লঞ্চমালিকরা নতুন রুটে তাদের লঞ্চ চালানোর আবেদন করেছেন। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলে সেসব রুটে এখানকার লঞ্চগুলো স্থানান্তর করা যেতে পারে।

এনএ