‘স্যার আমারে দেন স্যার, আমি মরিযারাম (মরে যাচ্ছি), আমারে বাঁচান। আমার ঘরও খানি (খাবার) নাই স্যার। আমারে একটু খানি দেন। আমারে বেটাইন্তে (পুরুষ) ঠেলাইয়া পানিত ফালাইদেরা।’ 

ত্রাণ নিতে এসে দুই হাত তুলে চিৎকার করে বার বার কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের ছমিরুন। রোববার (২৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। কিন্তু বন্যার্ত মানুষের তুলনায় ত্রাণ অপর্যাপ্ত। ত্রাণের আশায় বুক সমান পানি পর্যন্ত নেমেছেন অনেকে। মানুষের এতো ভিড় ঠেলে আসতে পারছিলেন না ছমিরুন। পেছন থেকে অন্যদের ধাক্কায় কোস্টগার্ডের নৌকা পর্যন্ত পৌঁছালেও ত্রাণ বিতরণকারীর দৃষ্টি কাড়তে পারছিলেন না। তাই দুই হাত তুলে আকুতি জানাচ্ছিলেন। 

অবশেষে এক সাংবাদিকের সহায়তায় ত্রাণের প্যাকেট ভাগ্যে জোটে ছমিরুনের। শুধু ছমিরুন নয়, তার পাশেই ত্রাণের প্যাকেটের জন্য হাহাকার করছে শত শত নারী পুরুষ।

ত্রাণ পাওয়ার পর ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় ছমিরুনের। তিনি জানান,  বেশ কয়েকবছর হলো স্বামী রমজান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন। বাবুর্চিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে পেঁয়াজ মশলা বেঁটে দিলে কিছু টাকা পান। সেই টাকা দিয়ে চলে সংসার। সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। বন্যায় চারিদিকে পানি থাকায় কোনো কাজ পাচ্ছেন না। বিয়ের অনুষ্ঠানও নেই। তাই কাজ না পেয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। ত্রাণ দিতে নৌকা আসবে শুনে এসেছেন নদীর পাড়ে। গত দশ দিনে এই প্রথম পেয়েছেন এক প্যাকেট খাদ্য সহায়তা। তাও শত শত মানুষের ভিড়ে ধাক্কা খেয়ে জোগাড় করতে হয়েছে দুবেলার খাবার। 

ছমিরুন বেগম বলেন,  একটা প্যাকেট খাবারের জন্য বুক পানিতে নেমেছি। কেউ আমাদের সাহায্য করছে না। মেম্বার চেয়ারম্যানের কোনো দেখাই পাইনি। বড় কষ্টে দিন পার করছি আমরা। আমাদের সাহায্য করেন। 

ত্রাণ বিতরণ কর্মকর্তা কোস্টগার্ডের লেফটেন্যান্ট কাজী আকিব আরাফাত বলেন, আমাদের কাছে যথেষ্ট ত্রাণ আছে। সবাইকে দেওয়া সম্ভব। নৌকায় করে অনেক ত্রাণ নিয়ে এসেছি। কিন্তু মানুষের এতো চাপে নাজেহাল অবস্থা। তাই সবাইকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেওয়া হবে। 

আরএআর