অবশেষে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হয়ে সড়ক পথে বরিশাল পৌঁছাল বাস। সাড়ে চার ঘণ্টায় বরিশালে এসে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন বাস চালকরা। রোববার (২৬ জুন) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পদ্মা পার হওয়া বাস এসে পৌঁছায়। 

যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল বাস। সকলের চোখে মুখে ছিল পদ্মা সেতু উপভোগের তৃপ্তির ছাপ। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন কাজে। আবার অধিকাংশই এসেছেন পদ্মা সেতু দেখতে। তারা বিকেলের বাসে কেউ কেউ ঢাকা ফিরে যাবেন।

বাস চালকরা জানিয়েছেন, ঢাকা শহর ত্যাগের পর আর কোনো যানজট বা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়নি তাদের। 

সেতু চালু হওয়ার প্রথম দিনের অনুভূতি একেক জনের কাছে একেক রকম হলেও সকলেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সাকুরা পরিবহনের যাত্রী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুরুচী বিশ্বাস বলেন, এই আবেগ কথায় প্রকাশ করা যাবে না। এতদিনের স্বপ্নের সেতু আজকে আমি নিজেই পেরিয়ে এলাম। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে যেন স্বর্গ। স্বর্গ পার হয়ে এলাম।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্ন অনেক বড় একটি প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে তাকে যে ধরনের বাধা বিপত্তি পার হতে হয়েছে, সেই বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম করার মতো দৃঢ়তা, সাহস, উদ্দীপনা, উৎসাহ তাঁর মধ্যে ছিল। এজন্য তাকে শুধু ধন্যবাদ দিলে বরং ছোট করা হবে। 

আরেক যাত্রী বলেন, পদ্মা সেতু পার হতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। আমরা আনন্দিত। গাবতলী থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত ৬শ টাকা টিকিটের দাম রাখা হয়েছে। 

সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, অনেক ভালো একটি জার্নি করলাম। সময় অনেক কম লেগেছে। কোনো যানজট পোহাতে হয়নি পদ্মাপাড়ে। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী স্বল্প সময়ে আসতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে। আর পদ্মা সেতু দেশের জন্য, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য একটি গৌরব। 

যাত্রী সিদ্দিক মোল্লা বলেন, আগে পটুয়াখালী পর্যন্ত ভাড়া ছিল সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ। এখন ৬০০ টাকা নিচ্ছে। এই ভাড়া সহনশীল। কারণ কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই সহজে আসতে পেরেছি।

ঢাকা-বরিশাল রুটের ইলিশ পরিবহনের যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, লঞ্চে ঢাকা গেলে পানি পথে সারারাত ভাসতে হয়। অথচ আজ সুন্দরভাবে সাড়ে চার ঘণ্টায় বরিশাল এসে নেমেছি কোনো ক্লান্তি ছাড়াই। 

আরেক যাত্রী মাহাবুব রেজা বলেন, এটি অপূর্ব অনুভূতি। যা ভাষায় সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। আমাদের দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে। আমি চাকরি করি, এখন দেখছি ঢাকা থেকে সকালে এসে বরিশালে অফিস করতে পারবো। 

এই উচ্ছ্বাস শুধু যাত্রীদের মাঝে নয়, চালকরাও বেশ আনন্দিত স্বপ্নের সেতুতে গাড়ি চালিয়ে। 

অন্তরা পরিবহনের চালক উজ্জ্বল বলেন, সকাল ৭টায় প্রথম ট্রিপ নিয়ে যাত্রা করে বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে নথুল্লাবাদে পৌঁছি। মোট সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় এসে পৌঁছানে সম্ভব ছিল। কিন্তু সেতুর টোলে গাড়ি সিরিয়ালের জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে। প্রথম অবস্থায় যাত্রীদের অনেক চাপ।

ইলিশ পরিবহনের সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় ছেড়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় এসে পৌঁছালাম। পদ্মা সেতু পার হওয়ার সময়ে মনে মনে ভাবছিলাম যেন স্বপ্ন অতিক্রম করছি। 

শুধু ঢাকা থেকে নয় বরিশাল থেকেও সড়ক পথে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সাকুরা পরিবহনের বরিশালের কাউন্টার ম্যানেজার আনিসুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত এই রুটে এসি গাড়ি চলাচল করছে। নন এসি গাড়ি এখনো যুক্ত করা হয়নি। প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। বরিশাল থেকে প্রথম ট্রিপ গিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টায় পৌঁছেছে। 

তিনি বলেন, অনেক যাত্রী কাজে যাচ্ছেন আবার অনেকে শুধু পদ্মা সেতু দেখার জন্য পরিবারসহ যাচ্ছেন। আমরা এসি বাসে ভাড়া ৭০০ টাকা নির্ধারণ করেছি।

এছাড়াও টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, পরিবহনভেদে ৬শ থেকে ৮শ টাকায় ঢাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। 

তবে বিআরটিসির বরিশাল ডিপো ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকাল থেকে মোট ১৪টি এসি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। সেই গাড়িগুলোই আবার যাত্রী নিয়ে বরিশাল আসবে। 

তিনি জানান, ৫শ টাকা করে এখন পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। মূল ভাড়া ৫৭৬ টাকা হলেও তা কমিয়ে রাখা হচ্ছে। 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকাল থেকেই অনেক যাত্রীর চাপ। যদিও রোববার স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেশি থাকে। কয়েকদিন পরে বলা যাবে কতটুকু যাত্রী চাহিদা বাড়লো এই রুটে। 

তিনি বলেন, বেসরকারি কোম্পানির গাড়ির বিভিন্ন স্থানে স্টপিজ থাকলেও বিআরটিসির স্টপিজ গুলিস্তানে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর