স্বপ্ন অতীত হয়ে বাস্তবে ধরা দিয়েছে পদ্মা সেতু। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধনের পর আজ রোববারই মূলত সাধারণ যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত হয় সেতুর দ্বার। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর আবেগ, প্রত্যাশা ও আকাঙ্খা ছিল সবচেয়ে বেশি। আর তাই পদ্মা সেতু এক নজর দেখতে হঠাৎ করেই ভিড় বেড়েছে বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে।

বাস শ্রমিকরা বলছেন, সেতু চালু হওয়ার একদিন আগে থেকেই বিলাসবহুল গাড়িগুলোর টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। ধারণা করা হয়েছিল উদ্বোধনের পরের দিন টিকিট আনুপাতিক যাত্রী ভিড় করবে টার্মিনালে। সকালেও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দুপুর গড়াতেই হঠাৎ বাড়তে শুরু করে যাত্রীর চাপ।

অধিকাংশ যাত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঢাকায় বিশেষ কাজ না থাকলেও শুধুমাত্র পদ্মা সেতু দেখতে রওয়ানা দিয়েছেন অনেকে।

সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা জানান, আগেই পরিকল্পনা ছিল উদ্বোধনের দিন সেতুটি দেখতে যাব। কিন্তু শনিবার বরিশালে বৃষ্টি ছিল আর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতায় পদ্মা সেতুতে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের ভ্রমণ কষ্টকর হতো। এজন্য আর অপেক্ষা করিনি আজ (রোববার) পরিবার নিয়ে রওয়ানা দিয়েছি।

এ শিক্ষার্থী বলেন, পদ্মা সেতুতে বেড়াতে যাব, বিষয়টি ভেবেই কাল রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। সত্যিকার অর্থেই পদ্মা সেতু আবেগের নাম। তিনি বিআরটিসি বাসে দুপুরের পর রওয়ানা দিয়েছেন বলে জানান। শারমিন বলেন, সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য দেখতেই দুপুরের পর গাড়িতে উঠেছি।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা স্রবুত কুমারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আজকেই যে ঢাকায় যেতে হবে এমন তাড়া ছিল না। বলতে পারেন অফিস থেকে অনুরোধ করে কাজের তাগিদ নিয়েছি। আগে পদ্মা পাড়ের ভোগান্তির ভয়ে লঞ্চে যেতাম। আজকে গাড়িতে যাত্রা করেছি। এতে পদ্মা সেতুও দেখা হবে আর অফিসের কাজও কারা হবে। বলতে পারেন, রথও দেখলাম, আবার কলাও বেচলাম। হাসতে হাসতে এই যাত্রী জানান, তিনি ওষুধ উৎপাদনকারী একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।

সাকুরা পরিবহনের বরিশালের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, আমাদের এই রুটে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি যুক্ত করা হয়েছে। তবে আজকে ঢাকা থেকেও যেমন গাড়ির চাপ রয়েছে তেমনি বরিশাল থেকেও। আমাদের গাড়ির টিকিট ২৪ তারিখই বিক্রি হয়ে গেছে। আজকেও অনেকে এসে টিকিট চাইছে। যারা আজকে এসেছে তাদের দু’একজনের প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়া দরকার হতে পারে। আর অধিকাংশই যাচ্ছেন পদ্মা সেতু দেখতে।

মিজান পরিবহনের চালক এনামুল হোসেন বলেন, সকালে যেসব যাত্রী এসেছেন তারা সকলেই পদ্মা সেতু পার হওয়ার সময়ে অনুরোধ করেছেন যেন গাড়ি ধীর গতিতে চালাই। এভাবে সব গাড়িই আজ সেতুতে ধীর গতিতে ছিল। কারণ যাত্রীদের কাজের চেয়ে আকাঙ্খার এই সেতুটি দেখতে কৌতুহল বেশি। 

তিনি জানান, ফেরার পথে এখনো অধিকাংশ যাত্রী বাসে উঠেই অনুরোধ করেছেন পদ্মা সেতু যেন ভালোভাবে দেখতে পারেন। আমার সঙ্গে অনেকের কথা হয়েছে, তারা শুধুমাত্র পদ্মা সেতু দেখতে ঢাকা যাচ্ছেন।

শুধু সরাসরি রুটের নয় ‘লোকাল’ পরিবহনগুলোর কাউন্টারেও উল্লেখযোগ্য ভিড়। বরিশাল-মাদারীপুর ও ফরিদপুর মালিক সমিতির আওতায় পরিচালিত বিএমএফ পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা উৎপল বসু জানান, সকাল থেকে মোটামুটি ভালোই যাত্রী ছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়েছে কাউন্টারে। যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিচ্ছেন।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাসরেক বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকেই নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ বেশি। তবে দুপুরের পর সেই সংখ্যা আরো বেড়েছে। মানুষ আগ্রহ নিয়েও যাচ্ছে যেন কাজও সেরে আসতে পারেন আবার মাঝখান দিয়ে পদ্মা সেতুও দেখা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস