যাত্রী কমেছে লঞ্চে, অর্ধেকেরও বেশি কেবিন-ডেক খালি
বিগত দিনে লঞ্চে কেবিন বা সোফা পেতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে তদবির করতে হতো। ডেকে আসন রাখতে বিকেলে এসে অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু রোববার (২৬ জুন) বরিশাল নদী বন্দরের চিত্রটি ছিল ঠিক তার উল্টো। নোঙর করে থাকা ছয়টি বিলাসবহুল লঞ্চের সামনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। বরং যাত্রীদের উদ্দেশ্য করে ছুটে যেতে দেখা গেছে লঞ্চ কর্মচারীদের।
উচ্চ শব্দে কেবিন-সোফা বিক্রির জন্য যাত্রীদের দৃষ্টি আর্কষণ করা হচ্ছে। কারণ যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুর দ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ এখন সড়ক পথে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
যাত্রীরা বলছেন, সড়ক পথে যাতায়াত সহজ আর ক্লান্তিহীন হওয়ায় লঞ্চের কিছু সংখ্যক যাত্রী কমতে পারে। তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে- যাত্রী কমেনি, অন্যান্য সময়ের মতই যাত্রীদের চাপ রয়েছে।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লঞ্চে কিছু সংখ্যক যাত্রী কমতে পারে। তবে এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কেবিনের যাত্রী কমতে পারে। তবে ডেকের যাত্রী কমার সম্ভাবনা নেই। আর ভাড়া কমানোর বিষয়ে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে যাত্রী ধরে রাখতে মালিকরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
নদী বন্দর থেকে জানানো হয়েছে, রোববার ঢাকার উদ্দেশ্যে ছয়টি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করেছে। লঞ্চগুলো হলো- এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১, কুয়াকাটা-২, সুন্দরবন-১১, সুরভী-৭, পারাবত-১২ ও পারাবত-৯।
কুয়াকাটা-২ লঞ্চের যাত্রী মহসিন ঢালী বলেন, আমি সচারচার লঞ্চে যাতায়াত করি। ঢাকায় ব্যবসার সুবাদে এই রুটে আসছি বিগত ১০ বছর ধরে। তবে আজ এসে মনে হলো যাত্রীদের বেশ কদর করছেন লঞ্চের স্টাফরা। পন্টুন ঘুরে শুনলাম সব লঞ্চই কেবিনে যাত্রী খুঁজছে।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের যাত্রী মিতু বলেন, আজকে অনেক যাত্রী কম। পুরো ডেক ভরেনি। আমরা তিনজন যাচ্ছি ঢাকা। কেবিনেও টাকা কমিয়েছে।
পারাবত-৯ লঞ্চের যাত্রী সুমন হাওলাদার বলেন, আগে ডাবল কেবিন ২৪শ টাকার কমে বিক্রি হতো না। আজ ১৮শ টাকায় নিলাম। সিঙ্গেল কেবিন আগে ১৪শ টাকায় বেচলেও আজ এক হাজার টাকায় বেঁচতে দেখলাম।
এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের যাত্রী আউয়াল মোল্লা বলেন, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যেমনই বলুক, যাত্রী কিছুটা কমেছে। আমি নিজেও গাড়িতে যেতাম। তবে পুরো পরিবারসহ যাব এজন্য আগেই টিকিট নিয়েছিলাম বলে যাচ্ছি।
লঞ্চে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কুয়াকাটা-২ লঞ্চে মোট ২৫০টি কেবিনের মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৭৮ টি, এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের মোট ১৬৫টি কেবিনের মধ্যে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭৫টি, এমভি পারাবত-১২ লঞ্চের মোট ২৪০টি কেবিনের মধ্যে ১২০টি বিক্রি হয়েছে, এমভি সুন্দরবন লঞ্চের ২৪০টি কেবিনের মধ্যে ২১৫টি বিক্রি করা হয়েছে।
এদিকে সুরভী-৭ ও পারাবত-৯ লঞ্চের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, পঞ্চাশ শতাংশ কেবিন খালি। ডেকও অর্ধেক খালি। সাধারণত এই মৌসুমে খুব বেশি যাত্রী হয় না। তবে আজ খুব কমই।
যদিও এমভি সুন্দরবন-১২ লঞ্চের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, সড়কের সঙ্গে লঞ্চের যাত্রীর তুলনা করলে চলবে না। লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রী ২০০ থেকে ৩০০ টাকার। মানে ডেকের যাত্রী। এই যাত্রী কখনো বাসে যাবে না। সুতরাং আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, যাত্রী কমবে কিনা তা সামনের ঈদের পর বোঝা যাবে। সাধারণত এই সময়ে যাত্রী কিছুটা কম থাকে। যারা বলছে যাত্রী কমেছে, তারা ভুল বলছেন।
এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের কাউন্টার ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলেন, এই সময়ে ডেকের যাত্রী কম থাকে। তবে এটি সত্য অনেক লঞ্চের কেবিনের যাত্রী অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর