পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে গত ২৫ জুন (শনিবার)। পরদিন রোববার সকাল ৬টা থেকে সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন শিমুলিয়া ঘাটের খুদে ব্যবসায়ীরা। আগের মতো মানুষজন এ ঘাটে আসেন না বলে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তাদের ব্যবসায়। বেঁচা-বিক্রি আর আগের মতো নেই। তবে শিমুলিয়া ঘাটে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৩ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলায় এ কদিন কিছু মানুষজন আসছেন। 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কারণে প্রতিদিন বিকেলে ওই এলাকায় বেশ লোকের সমাগম ঘটছে। তাই বিকেল বেলা ভালো বেচাঁ-কেনা হলেও দিনের অন্যান্য সময় তেমন বেচাঁ-বিক্রি নেই খুদ্র ব্যবসায়ীদের।

শিমুলিয়া ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে থেকেই এ ঘাট দিয়ে ফেরি ঠিকমতো না চলায় ঘাটে বেঁচা-কেনা কম ছিল। উদ্বোধনের পর বিকেলে এ ঘাটে বেশ লোকের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে লোকজন বিকেল হলে ঘাটে ঘুরতে এলে ভালো বেচাঁ-কেনা হয়। দিনের বাকি সময় বেঁচা-কেনা তেমন হয় না বললেই চলে।

ঘাটে ভ্যানে করে পান বিক্রি করেন কিশোর সিয়াম। তার দোকানে ৫ থেকে ১০০ টাকা মূল্যের পান পাওয়া যায়। আগে ঘাটে এই পানের ব্যবসা তার কাকা করতেন। এখন কিশোর সিয়াম (১৬) নিজেই ভ্যান নিয়ে ব্যবসা করেন। সিয়াম বলেন, ঘাটে আগে সারা দিনই অনেক মানুষ আসত। কিন্তু এখন শুধু বিকেলে মানুষ আসে। কাস্টমার অনেক কমে গেছে। আর কিছু দিন দেখি, না হলে পরে অন্য কোথায়ও গিয়ে ব্যবসা শুরু করব। 

তিনি আরও বলেন, কাস্টমার কম থাকলেও দুঃখ নেই। আমাদের বাড়ির সামনে এখন পদ্মা সেতু হইছে। অনেক লোক ঘুরতে আসতেছে দেইখা খুব ভালো লাগতাছে।

প্রসাধনীসামগ্রী বিক্রেতা বাতেন মিয়া বলেন, আমার বাড়ি মাদারিপুরের কালকিনিতে। গত ২০ বছর ধরে ঘাটে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করি। আগে মাওয়া ঘাটে বিক্রি করতাম, এখন শিমুলিয়া ঘাটে বিক্রি করি। তবে সেতু হওয়ার পর লোকজন ঘাটে কমে গেছে, সব সেতুর ওপর দিয়ে যায়, ঘাটে আসে না। সেতু হইছে এখন ইচ্ছা করলেই সেতুর ওপর দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাইতে পারমু, এ জন্য ভালো লাগতাছে।

ঘাটের আইসক্রিম বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, আগে ঘাটে আইসক্রিম বিক্রি করে ৫/৬শ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন ঘাটে লোকসংখ্যা কম। চিন্তুা করতেছি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিক্রি করব। রিজেকের মালিক আল্লাহ। পদ্মা সেতুতে নিজের বসতভিটা-ঘরবাড়ি সব দিয়েছি, তারপরও সেতু চালু হইছে দেইখা ভালো লাগতেছে।

ঘাটে খোলা আকাশের নিচে ভাত বিক্রি করেন কাইয়ূম। তিনি বলেন, এ ঘাটে আগের মতো লোক নাই। কিছু লোক আসে বিকেল বেলায়। বিকেলে তো আর মানুষ ভাত খায় না। অল্প কিছু লেবার-হকার ঘাটে থাকে তারাই সকালে-দুপুরে ভাত খেতে আসেন। বেঁচা-বিক্রি অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে।

সরবত বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, সরবত তো মানুষ দুপুরে রৌদ্র উঠলে খায়। কিন্তু দুপুর বেলায় এখন ঘাটে লোকজনই থাকে না। বিকেল হলে আসেন। তাই চিন্তা করতাছি এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য কোনো ব্যবসা করমু। আল্লায় মুখ যেহেতু দিছে রিজিকও দিব। 

সরেজমিনে, ২৬ জুন দিনব্যাপী ঘুরে শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায় সকাল থেকে এ ঘাটে তেমন লোকজন নেই। তবে বিকেলে ঘাটের পাশে পদ্মা নদীর পারে এবং ওই স্থানে অনুষ্ঠিত কনসার্টে বেশ কিছু লোকের সমাগম ঘটে। আজ ২৭ জুন রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওই ঘাটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।

ব.ম শামীম/আরআই