উজানের ঢল আর অতিবৃষ্টিতে পানি বেড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীতে। প্রবল স্রোতে নদীর চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে আশুগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত চরসোনারামপুর গ্রামের কয়েকটি বসতঘর, রান্নাঘর, টয়লেট ও টিউবওয়েল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

পানির কারণে অর্ধেক অংশ ভেঙে গিয়ে এখন বিলীনের পথে চরের একমাত্র শ্মশানটিও। অব্যাহত ভাঙনের কারণে নদীগর্ভে বিলীনের ঝুঁকিতে চরের একাংশের অন্তত অর্ধশত ঘর-বাড়ি।

চরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চরসোনারামপুরে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই চরে ভাঙন শুরু হয়। ফলে এখন ভাঙন আতঙ্কে অনেক পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কেউ কেউ ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। পানি যদি আরও বাড়ে, তাহলে অনেক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ ছাড়া নদী ভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে চরে থাকা একটি বৈদ্যুতিক টাওয়ার।

চরের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আশা বিশ্বাস জানান, দুই দিন তাদের রান্নাঘর, খাবার ঘর, টিউবওয়েল ও টয়লেট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের কিছু জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারলেও এখন যে ঘরটিতে আছেন, সেটিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে চরের আরেক বাসিন্দা রেখা রাণী দাস জানান, রান্নাঘর নদীতে বিলীন হওয়ায় এখন প্রতিবেশীদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করতে হচ্ছে। প্রতি বছর ভাঙতে ভাঙতে তার বাড়ির জায়গা অর্ধেকই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে এখন অসহায় অবস্থায় আছেন।

চরের বাসিন্দা প্রদীপ দাস জানান, ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার চর ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে ভাড়া বাসায় উঠছেন। অনেকের অনেক জিনিসপত্র নদীতে ভেসে গেছে। সরকারের কাছে ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান তিনি।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, নদীর মাঝখানে চরের ভাঙন স্বাভাবিক। এটি রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু করার নেই। তবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হওয়ায় বৈদ্যুতিক টাওয়ারটি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ দিকে, কিছুটা উন্নতি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি। তবে এখনো পানিবন্দি রয়েছে অন্তত সাড়ে ৬ হাজার পরিবার। বাড়ি-ঘর থেকে পানি সরতে আরও চার-পাঁচদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আজিজুল সঞ্চয়/আরআই