বিডি ফুডের ডিস্ট্রিবিউটর ও আদম ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনকে অপহরণ করে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল খান সানাসহ (৩২) ৫ জনকে গেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৭ জুন) দুপুর ২টার দিকে গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

এর আগে রোববার (২৬ জুন) রাতে সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার সানা সাঁথিয়া উপজেলার কোনাবাড়ি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে ও সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। অপরজন মেহেদী হাসান রুবেল (৩০), তিনি সাঁথিয়ার কোনাবাড়ি এলাকার জামাল সরদারের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন, কোনাবাড়ি গ্রামের নিপেন কর্মকারের ছেলে সন্দীপ কুমার (৩২), চর ভদ্রকোলা গ্রামের আজগর আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী (৩৮) ও চর ভদ্রকোলা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মিলন হোসাইন (২৯)।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুর ২টার দিকে সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের বনগ্রাম বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হেলাল উদ্দিন নামে বিডি ফুডের ডিস্ট্রিবিউটরকে অপহরণ করে সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর ব্যক্তিগত ‘ফেস টু ফেস’ অফিসকক্ষে নিয়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে নির্যাতন করা হয়। 

এদিকে অপহরণের পরে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে জাতীয় জুরুরি সেবা ৯৯৯- এ অভিযোগ দিলে পুলিশ রাত ১০টার দিকে সাঁথিয়া পৌর মেয়রের ব্যক্তিগত ‘ফেস টু ফেস’ অফিস থেকে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি ও সহযোগীসহ ৫ জনকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে হাসিবুল হক সানাকে প্রধান আসামি করে সোমবার (২৭ জুন) সকালে সাঁথিয়া থানায় অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তাদের পাবনার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়।

সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুল হক স্বপন প্রামানিক বলেন, সম্পুর্ণ অন্যায়ভাবে সানাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকার নোংরা রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার তিনি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানানো হবে।

তবে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। ব্যক্তির অপকর্মের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।

সাঁথিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মো. সিদ্দিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল দুপুরে হেলাল নামে একজনকে অপহরণ করে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে ভুক্তভোগী পরিবার জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেয়। সে ফোন পেয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। 

এ সময় অভিযুক্ত ৫ জনকে আটক করা হয়। থানায় এনে তাদের বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা বিষয়টি স্বীকারও করেছে। আজ সোমবার সকালে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাঁথিয়া উপজেলায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি সড়কের কাজ চলাকালে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবি করেন হাসিবুল হক সানা। ২০২০ সালের ২৯ আগস্ট চাঁদার টাকা না পেয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজারকে মারধর করেন তিনি। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে হাসিবুল হক খান সানাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। 

এরপর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রায়হান হোসেন হৃদয় নামে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর থেকে চাঁদার টাকা না পেয়ে তাকে মারপিট করার অভিযোগে সাঁথিয়া থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর দীর্ঘদিন পরে গত বছরের শেষের দিকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

রাকিব হাসনাত/আরআই