‘সবাই সব কিছুই ফিরে পাবে, কিন্তু আমার মাকে আমি আর ফিরে পাব না। আমার মাকে যারা আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

আহাজারি করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহে প্রেমের টানে প্রেমিকযুগলের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মেয়েপক্ষের লোকজনের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া লাইলী আক্তারের মেয়ে আতিয়া। 

বুধবার (২৯ জুন) নিহতের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছিল পরিবেশ। তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এ হত্যাকাণ্ড। তবে এখনো নিখোঁজ সেই প্রেমিক সিরাজুল ইসলাম ও প্রেমিকা খুকি। 

গত রোববার (২৬ জুন) প্রেমিক সিরাজুলের হাত ধরে পালিয়ে যায় প্রতিবেশী খুকি। এ ঘটনা মেনে নিতে না পেরে মঙ্গলবার সকালে সিরাজুলের মাকে নির্যাতনের পর তার হাত-পা বেধে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন মেয়ের মা-চাচিরা। এরপর সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভুক্তভোগী লাইলী আক্তার। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঈশ্বরদিয়া পূর্বপাড়া এলাকার মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী আসমা আক্তার। 

কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার দিনই আটজনকে আসামি করে মামলা করে নিহতের স্বামী আব্দুর রশিদ। পরে রাতেই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। 

নিহত লাইলী আক্তারের স্বামী আব্দুর রশিদ বলেন, আমার প্রতিবেশী খোকন মিয়ার মেয়ে খুকির বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। তবে আমার ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক থাকায় গত রোববার আমার ছেলের সঙ্গে সে পালিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয়দের নিয়ে মীমাংসার প্রস্তুতি চলছিল। 

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আমি কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলে মেয়ের মা কনা, চাচি নাসরিন, আসমা ও রুমাসহ আরও কয়েকজন বাড়িতে এসে আমার স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে মারধর করেন এবং একটি ঘরে নিয়ে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে বাড়িতে ফিরে গুরুতর আহত অবস্থায় লাইলীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করেন। সন্ধ্যার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাইলীর মৃত্যু হয়।  

প্রতিবেশী ইব্রাহিম বলেন, ছেলে-মেয়ে প্রেম করে পালিয়ে গেছে। বিষয়টির সমাধান অবশ্যই ছিল। তাই বলে পুড়িয়ে মেরে ফেলবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন এমন অপরাধ আর কেউ করার সাহস না পায়।

উবায়দুল হক/আরএআর