‘আমি আর উৎপল দুজনই চাকরি করতাম। উৎপল কলেজে আর আমি সেতু বিভাগে। গত বছর বিবাহবার্ষিকীতে আমরা দুজন দুই জায়গায় ছিলাম। তাই বিবাহবার্ষিকী পালন করতে পারিনি। তাই উৎপলের ইচ্ছা ছিল, এবার খুব ধুমধাম করে আমাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করার।’ কথাগুলো বলেই অঝরে কাঁদতে থাকেন নিহত শিক্ষক উৎপলের স্ত্রী বিউটি রানী নন্দী।

উৎপলের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ জুন পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় উৎপল ও বিউটির। উৎপল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। বিউটি রানী মন্ডল একই জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের মৃত শংকর নন্দীর মেয়ে।

উৎপল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী বিউটি রানী নন্দী ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতোকোত্তর শেষ করে সেতু বিভাগে কর্মরত আছেন।

উৎপলের এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ২২ বছর আগে উৎপলের বাবা মারা গেছেন। অনেক কষ্ট করে সে পড়ালেখা করেছিলেন। কখনো কারো মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতেন না। তার ব্যবহারেও ছিল ভদ্রতার ছাপ। 

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে সাভারের হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ফুটবল খেলা চলছিল। প্রভাষক উৎপল মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু ক্রিকেটের স্ট্যাম্প নিয়ে এসে উৎপলকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিউতে রাখা হয়। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে সোমবার সকালে তিনি মারা যান।

পরে সোমবার (২৭ জুন) রাত ২টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরের দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয়ে রাত ৩টার দিকে গ্রামের বাড়ির পার্শ্ববর্তী লাহিড়ী মোহনপুর মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। 

শুভ কুমার ঘোষ/এসপি