খুলনায় মু‌ঞ্জির মাস্টার হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার জ‌রিমানা অনাদা‌য়ে, আরও ৬ মা‌সের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। 

এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক মামলায় ওই দুই আসা‌মিকে ৭ বছ‌রের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জ‌রিমানা অনাদায়ে, আরও ৬ মা‌সের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মাহমুদা খাতুন এ রায় ঘোষণা করেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন গিলাতলা ১ নং কলোনির মো. সরোয়ার হোসেন ওরফে সানোয়ারের ছেলে আনুয়ার হোসেন ও একই এলাকার মো. গোলাম জিলানী মল্লিকের ছেলে মো. আশ্রাফ আলী।

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী কেএম ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার ৬ জন আসা‌মির বিরু‌দ্ধে কোনো অ‌ভি‌যোগ প্রমাণ কর‌তে না পারায় আদালত তা‌দের বেকসুর খালাস দি‌য়েছেন। তারা হ‌লেন বাদশা শেখ, সো‌হেল, রুবেল, মেজবাহ উ‌দ্দিন মুকুল, আহাদ ও এ‌কেন্দার ওরফে এসকেন।

মুঞ্জির মাস্টার খানজাহান আলী থানার মাত্তমডাঙ্গা শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে মুনজির মাস্টার মাত্তমডাঙ্গা যুব সংঘের ভেতরে গিয়ে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে প্রধান ফটক দিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী যুব সংঘের ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে একের পর এক বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। এর মধ্যে দুটি বোমা মুঞ্জির মাস্টারের হাতে পিঠে লাগে।

মারাত্মক জখম অবস্থায় যুব সংঘের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান। তবে মারা যাওয়ার আগে তিনি ভাই বেনজীর আহমেদের কাছে সব ঘটনার বিবরণ দিয়ে যান।

জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিহতের ভাই বেনজীর আহমেদ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেন।

হত্যা ও বোমা অংশের তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন খানজাহান আলী থানার এস আই মো. ফারুকুল ইসলাম। তিনি একই বছরের ১২ ডিসেম্বর বোমা ও ২০০৬ সালের ৩০ জুন মুনজির মাস্টার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, সমাজ বিরোধী কাজের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। অপরদিকে আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। 

এসব কাজের বিরোধিতা করায় তাকে ওই সব সদস্যরা হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন এবং পরে তাকে হত্যা করে, যা এ হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পর আজ এ মামলার রায় ঘোষণা হলো। 

মোহাম্মদ মিলন/আরআই