মাঝখানে কীর্তনখোলা নদী। এক পাড়ে নগরায়নের উন্নয়নে ঝলমলে বরিশাল। ঠিক তার ওপারে চরকাউয়ার একাংশে ভাঙনকবলিত মানুষের হাহাকার। নিজের বসতভিটা হারিয়ে কেউ অন্যের জমিতে, কেউ ভাড়া বাসায় থাকছেন। 

ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনো সহায়তা করছেন না। এমনকি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার তিন বছর অতিবাহিত হলেও নদী ভাঙন ঠেকাতে প্রাথমিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। ফলে এক গ্রামের ৩০ পরিবারের ভিটে-মাটি গিলে খেয়েছে কীর্তনখোলা নদী।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, তিনটি স্থানে ভাঙন ঠেকাতে ৫৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। পাস হলে শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী ছোট্ট গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে ভাঙছে। বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে বিল্ডিং, পুল, আর বাড়ির আঙিনা। বাসিন্দারা নিজস্ব উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা লিটন হাওলাদার বলেন, বিগত ৭-৮ বছর ধরে কীর্তনখোলা আমাদের গ্রামটি ভাঙছে। চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে অনেক গিয়েছি। কিন্তু কোনো সাহায্য পাইনি। এমনকি চেয়ারম্যান একবার এসেও খবর নেন না। আমাদের চেয়ারম্যান আছে না মরে গেছে সেটাইতো বুঝতে পারছি না। একটি এলাকা ভেঙে বিলিন হয়ে যাচ্ছে অথচ তাদের দেখা নেই।

নুরজাহান বেগম বলেন, আমার বসতভিটা সব নদীতে নিয়ে গেছে। নিজের জমি হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে কুড়ে ঘর তুলে থাকি। আমাদের আসনের এমপি হলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি এসেছিলেন অনেক আগে। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ নেননি।

আনসার দালাল নামে একজন বলেন, একেক জন বাসিন্দা ৭-৮ বার ঘর সরিয়েছেন। তারপরও রক্ষা হয়নি। কমপক্ষে ৩০টি ঘর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। আমরা এখন সব হারিয়ে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকি। 

তিনি বলেন, পানিমন্ত্রী (পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী) এক জুনে এসে আশ্বাস দিয়ে গেলেন ভাঙন ঠেকাবেন। তারপর দুই বছর পার হয়ে গেল। ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজই শুরু হয়নি।

সাব্বির নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর পাড় ভাঙে আর আমরা বাড়িঘর সরাই। সরাতে সরাতে আর কোনো জায়গা নেই। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকি। যখনই নদী ভাঙন শুরু হয় তখন আমরা চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে যাই। কিন্তু তারা কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। আমরা নিঃস্ব হয়ে যাই আর তারা ভ্রুক্ষেপ করে না।

আরেক নারী বলেন, আমার স্বামীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে খবর গেল নদী ভাঙনে বাড়িঘর নিয়ে গেছে। খবর শুনে আমার স্বামী স্ট্রোক করে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। তার দাফনও করতে হয়েছে অন্যের জমিতে। 

তিনি বলেন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এসেছিলেন দুই বছর আগে। আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের বাড়িঘর রক্ষায় কাজ করবেন। তিনি আমাদের আসনের এমপি। কিন্তু আমাদের জন্য কিছুই করেনি।

চরকাউয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি বলেন, ওই স্থানে দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙন চলছে। ভাঙনকবলিতদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু পারছি সহায়তা করেছি। ঘটনাস্থলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি। কমপক্ষে ৩০ পরিবার নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, চরকাউয়া, চাঁদমারি এবং জাগুয়ায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে। মাননীয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টার কারণে সেটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। যে কোনো সময়ে পাস হয়ে যাবে। পাস হলে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর