পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে মাত্র পাঁচ দিন হলো। এরই মধ্যে বন্ধের পথে শিমুলিয়া ঘাটের অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে বন্ধ রয়েছে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল। বাস ও স্পিডবোট চলাচলও বন্ধের পথে। যে কারণে এ ঘাটে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে।

এক সময় ঘাটের হোটেলগুলোর সামনে ইলিশ মাছের পসরা সাজিয়ে বসে থাকতেন দোকান মালিকরা। দোকান কর্মচারীদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকতো চারদিক। শিমুলিয়া ঘাট হয়ে যাতায়াতকারীরা ছাড়াও মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ এই ঘাটে আসতো ইলিশ মাছ খাওয়ার জন্য। গভীর রাত পর্যন্ত ঘাটের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় জমেই থাকতো। শিমুলিয়া ঘাটে দাঁড়ালেই শোনা যেত ‘পদ্মার ইলিশ আছে, ভাত খেয়ে যান। এই পদ্মার ইলিশ আছে, আসেন আসেন।’ এখন ঘাটে মানুষই নেই। এক সময় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে যে সব হোটেলে খাবার খেতে হতো, এখন সে সব হোটেল খাবার নিয়ে বসে থাকছে মানুষের অপেক্ষায়। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটের প্রবেশ পথের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো এখন মানুষ শূন্য।  ডাকার জন্য মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন না দোকানের কর্মচারীরা। মাঝে মাঝে দু-একজন করে ক্রেতা আসছেন। লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটের প্রবেশ পথে থাকা ১৫-২০ টি খাবার হোটেল একেবারেই ফাঁকা।  ক্রেতার অপেক্ষায় মন খারাপ করে বসে আছেন হোটেল মালিকরা। কর্মচারীরা বসে অলস সময় পার করছেন। হোটেলগুলোতে কমেছে কর্মচারীর সংখ্যা। চাকরি হারিয়েছেন অনেকে।

শিমুলিয়া ঘাটের তাজমহল হোটেলের এক কর্মচারী বলেন, আগে মানুষ হোটেলে ঢুকে খাবারের অপেক্ষায় বসে থাকতো, আর এখন আমরা খাবার নিয়ে মানুষের অপেক্ষায় বসে থাকি।

নিউ মোল্লা হোটের কর্মচারী আকতার হোসেন বলেন, আগে আমরা ১৫-২০ রকমের ভর্তা, ভাজিসহ বেশ কয়েক প্রকার মাছ রান্না করতাম হোটেলে। কিন্তু এখন মানুষজন না আসায় আইটেম অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দিয়েছি। তারপরও বেচাকেনা নেই।

নিউ মায়ের দোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ শাহিন শেখ বলেন, আশা করেছিলাম পদ্মা সেতু হওয়ার পর আমাদের শিমুলিয়া ঘাটে দর্শনার্থী ও পর্যটক বাড়বে। আমাদের ব্যবসা আরও ভালো হবে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সব পাল্টে গেল। আগে যেখানে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি করতাম। এখন মাত্র ৮/১০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

বিসমিল্লাহ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক সুমন হাসান বলেন, হোটেল খুললেই ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকের বিলসহ সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ। এই খরচের টাকাও বিক্রি করতে পারছি না।

একই অবস্থা মা হোটেল, নিরিবিলি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মোল্লা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, আলিফ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টসহ প্রায় অর্ধশতাধিক হোটেলের। এ সমস্ত হোটেল ছাড়াও ওই ঘাটে খোলা আকাশের নিচেও ছিল অনেক ছোট ছোট হোটেল। ওইসব ছোট হোটেলের অস্তিত্ব এখন আর চোখে পরে না।

শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবসায়ীরা বলেন, এ ঘাটে খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান, চা-কফি, বিস্কুট, ফল বিক্রেতা, হকারসহ বিভিন্ন শ্রেণির কয়েক হাজার মানুষ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পদ্মা সেতু নির্মাণে আমরা সবাই খুশি। যদি ঘাটটিকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়, ঘাটের আশপাশে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়, তাহলে এই ঘাটে আবারো মানুষের আনাগোনা বাড়বে। ঘাটের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে যাবে।

তারা আরও বলেন, ঘাটে ঢোকার সড়কে প্রায় শতাধিক ফলের দোকান ছিল। ওই সমস্ত দোকানের সামনে ভিড় লেগে থাকতো। এখন সেখানে সুনসান নিরবতা। বিক্রি না থাকায় অনেকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন । এখন মাত্র ৪-৫টি দোকান নিয়মিত খোলা হয়। তারপরও বেচাকেনা নেই। আগে প্রতিদিন একেকটি ফলের দোকানে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি হতো। এখন এক হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে কষ্ট হয়। 

ব.ম শামীম/আরএআর