ঘর থেকে বের হলো হেলেদুলে। শোঁ শোঁ করে নিশ্বাস ছাড়ে অবিরত। একটু পর জানা গেল নাম তার 'ভিক্টর'। বিশালদেহী ভিক্টরের ওজন প্রায় ৩০ মণ। ভিক্টর রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় গরু, এমন দাবি তার মালিকের। তাই একে একনজর দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছে বাড়িতে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস শেখের বাড়িতে বড় হচ্ছে ভিক্টর। দুই বছর ধরে তাকে অতিযত্নে লালনপালন করছেন ইউনুস-বুলু দম্পতি। এখন তাকে কোরবানির হাটে বিক্রির প্রহর গুনছেন তারা। ভাবছেন আর্থিকভাবে হবেন একটু সচ্ছল।

খামারি ইউনুস জানান, গরুটির উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট, লম্বায় ৭ ফুট। আর ওজন ১২০০ কেজি (৩০ মণ) হবে। দীর্ঘদেহী এই ষাঁড় গরুটি এবার কোরবানির হাটে তোলা হবে। তাই আগে থেকেই এর দাম নির্ধারণ করে রেখেছেন ১২ লাখ টাকা।

দুই বছর আগে ফরিদপুর সদর উপজেলার পরমান্দপুর গো হাট থেকে ৮৭ হাজার টাকা দিয়ে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুটিকে কিনে আনেন ইউনুস। আদর করে গরুটির নাম রাখেন ভিক্টর। খাদ্য হিসেবে ভিক্টরকে খাওয়ানো হয় ভুট্টা, ছোলা, খেসারি, গমের ভুসি, খড় ও তাজা ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল। প্রতিদিন ভিক্টরের জন্য বরাদ্দ হয় ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা।

ইউনুস শেখ বলেন, ভিক্টরকে খুব বেশি একটা ঘর থেকে বের করা হতো না। তবে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এখন বের করি। সদর উপজেলার মধ্যে ভিক্টর আকার, আকৃতি ও ওজনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় গরু। প্রতিদিন ভিক্টরকে একনজর দেখার জন্য শত মানুষ ভিড় করছে। তার দাম চাচ্ছি ১২ লাখ টাকা।

ইউনুসের স্ত্রী বুলু বেগম বলেন, ভিক্টরকে আমি নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে লালনপালন করেছি। ওকে দিনে দুবার গোসল করাতে হয়। গোয়াল ঘরটিও দুই বেলা পরিষ্কার করতে হয়। সারা দিনই যত্নের মধ্যে রাখি গরুটিকে। ভিক্টরকে বিক্রির কথা বলার পর থেকে গরুটি খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আমারও বুকটা ফেটে যাচ্ছে, কষ্ট লাগে। নিজেদের একটু সচ্ছলতার জন্য ভিক্টরকে বিক্রি করতে হচ্ছে।

প্রতিবেশী মো. লালন ফকির বলেন, আমাদের এলাকায় ভিক্টরের মতো এত বড় গরু আগে কখনো দেখিনি। দুই বছর আগে ইউনুস ফরিদপুর থেকে একটা বাছুর কিনে এনে লালনপালন শুরু করেন। তিনি ও তার স্ত্রী অনেক কষ্ট ও যত্ন করে গরুটিকে লালনপালন করেছেন। আমরাও চাই তারা যেন ন্যায্য দামে গরুটিকে বিক্রি করতে পারেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. খায়ের উদ্দীন আহমেদ বলেন, কৃষক ইউনুস শেখের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তার গরুর চিকিৎসা ও খাদ্যতালিকাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। কোরবানির ঈদে গরুটিকে বিক্রির ব্যাপারে আমরা তাকে সহায়তা করব।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ