মোহাম্মদ সিফাত (১৪) দুই বছর বয়সে স্থানীয়ভাবে ভুল চিকিৎসায় পা হারায়। পা হারানোর পর এক বছর বন্ধ ছিল পড়াশোনা ও খেলাধুলা। কিন্তু মানসিকভাবে অদম্য সিফাত দমে যায়নি। বাঁশের লাঠিতে ভর করে পড়ালেখা ও সংসারের হাল ধরেছে সে।

গত বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনছিপ্রাং গ্রামের সিফাতের সঙ্গে দেখা হয়। হাতে বাঁশের লাঠি নিয়ে এক পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বিবর্ণ সুরে কথাগুলো বলছিল সিফাত।

সিফাতের বাবা লেড়া মিয়া বছর কয়েক আগে মারা যান। তিনি পেশায় ছিলেন জেলে। পরিবারে পাঁচ ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে সিফাত সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়। চার ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার নিয়ে থাকেন। তারা সিফাত ও মায়ের তেমন খোঁজ নেন না। তাই সিফাতের মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সিফাতের ভরণপোষণ করেন।

সিফাত উনছিপ্রাং মহিসুন্নাহ মাদরাসার নুরানি শাখার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। সিফাত জানায়, আর দশজনের মতো সেও বাঁচার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। প্রতিদিন এক কিলোমিটার হেঁটে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মাদরাসায় যায়। কারও সহযোগিতা ছাড়া এক পায়ে ভর করেই ওঠে মাদরাসার দোতলায়। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও চলাফেরায় অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হয় না তার।

পা না থাকায় সবার মতো চলাফেরা, খেলাধুলা, পড়াশোনাসহ সব জায়গায় অবহেলার শিকার হতে হয় সিফাতকে। কিন্তু তার অদম্য প্রতিভা ও মনোবলের কাছে সেসব বাধা উপেক্ষিত।

সিফাত ভালো ফুটবল খেলে। এক পা দিয়ে সে এমনভাবে ফুটবল খেলে, দেখে মনে হবে যেন স্বাভাবিক মানুষের মতোই খেলছে। শুধু ফুটবল নয়, এক পা দিয়ে অনায়াসে ক্রিকেট ও হা-ডুডু খেলে। ঝাঁকি জাল দিয়ে নাফ নদীতে চিংড়ি শিকার করে। অনেকটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার জীবনযাপন।

সিফাত জানায়, পারিবারিক অভাবের কারণে অল্প বয়সে জীবনসংগ্রামের নেমে পড়ে সেও। তার বাবার মৃত্যুর পর সব ভাই আলাদা সংসার করে। তার মা মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে কাজ করেন। সিফাত দিনের বেলায় ছোট একটি দোকান করে। রাতে মাছ শিকার করে।

চোখের কোণে পানি নিয়ে সিফাত ঢাকা পোস্টকে বলে, সবাই শুধু আশ্বাস দেন। কিন্তু কেউ কিছু কেনে না। এক পা নেই বলে কি আমি ফেলনা হয়ে গেছি? এত কষ্টের মধ্যে লেখাপড়া, সংসার সবকিছু চালাই। আমার যে আত্মসম্মান আছে, সেটা কেউ বোঝে না।

স্থানীয় যুবক শেফায়েত উল্লাহ বলেন, সিফাত একজন প্রতিভাবান ছেলে। পড়াশোনা, খেলাধুলাসহ সবকিছুতে সে পারদর্শী। অভাব-অনটনের কারণে সবকিছু থেকে পিছিয়ে পড়েছে সে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে সহযোগিতা করার জন্য যেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। তবে সরকারি কোনো সহায়তা পেলে সে নিজে ও তার মাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারবে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, সিফাত একজন প্রতিভাবান ছেলে। তার পড়াশোনার জন্য যত সহযোগিতা করার দরকার, আমি করে যাব।

এনএ