নান্দাইল পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর ভূঁইয়া হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তৌফিকুল ইসলাম মামুনকে সভাপতি ও শাহ মাহমুদুল হক সৌরভকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কিত কমিটি থেকে অন্তত ১০ জন নেতা সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানিয়েছেন সদ্যঘোষিত কমিটির সহসভাপতি ও নিহত আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে হেফজুল আলম ভূঁইয়া রাজীব। 

তিনি বলেন, আমি এতিম হয়েছি। বাবা হারানোর বেদনা কেবল আমিই বুঝি। আমার বাবার হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না। তাই আমি কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরও শরণাপন্ন হব। 

গত ২৮ জুন রাতে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের যৌথ স্বাক্ষরে নান্দাইল উপজেলা ছাত্রলীগের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পাঁচ বছর পর ঘোষিত কমিটিতে তৌফিকুল ইসলাম মামুনকে সভাপতি ও শাহ মাহমুদুল হক সৌরভকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া সহ-সভাপতি পদে ১৭ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছে আরও ৬ জনের নাম।

অভিযোগ উঠেছে, ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক উভয়ই ২০১৪ সালে নান্দাইল পৌর আওয়ামী লীগের প্রয়াত আবুল মনসুর ভূঁইয়া হত্যা মামলার আসামি। নিহত মনসুর ভূঁইয়া নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার বড় ভাই। ওই বছরের ২০ নভেম্বর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে খুন হন মনসুর ভূঁইয়া। পরে নিহতের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বাদী হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত নামীয় আরও ৩০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। 

মামলায় বর্তমান সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম মামুনকে ৩৪ ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মাহমুদুল সৌরভকে ২৬ নম্বর আসাামি করা হয়। হত্যা মামলার আসামি ও বিতর্কিত লোকজন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ায় পদবঞ্চিতরা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে বুধবার বিক্ষোভ করে। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলেই তাদের আসামি করা হয়। মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এখন শুনছি ওই দুইজনকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ঘটনাটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অভিশাপ। এতে হিংসা-হানাহানি বেড়ে যাবে। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কমিটির সহসভাপতি হেফজুল আলম ভূঁইয়া রাজীব অভিযোগ করেন, কমিটিতে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদিন তুহিনের অনুসারী এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। হত্যা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চার্জশিটে তাদের নাম বাদ দিলেও মামলাটি উচ্চ আদালতে রয়েছে। 

হত্যায় জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম মামুন বলেন, রাজনৈতিকভাবে দমিয়ে রাখতেই আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছিল। হত্যায় সম্পৃক্ত না থাকায় ডিবি, পিবিআই ও পুলিশ তদন্ত শেষে তাদের বাদ দিয়ে আদালত ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
 
কমিটির বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন ভাই ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ ও জোর সুপারিশে তাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ ছাড়া তারা ত্যাগী এবং পরীক্ষিত। তারা চার্জশিটে অভিযুক্ত নয়। উচ্চ আদালত যদি পরবর্তীতে কোনো সিদ্ধান্ত নেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উবায়দুল হক/আরআই